‘মৌলবাদী’ মন্তব্যে বিতর্কে বিএনপি; ধর্মপ্রাণ সমর্থকদের আস্থা কি হারাবে?

by hsnalmahmud@gmail.com

হাসান আল মাহমুদ >>

সাম্প্রতিক একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে নতুন বিতর্কে জড়িয়েছে বিএনপি। গত রোববার (১৭ আগস্ট) লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ যেন মৌলবাদ ও চরমপন্থার অভয়ারণ্য না হয়’— এ বিষয়ে সবার সতর্ক থাকতে হবে।

বিজ্ঞাপন
banner

কিন্তু তার এই বক্তব্য ঘিরে সর্বত্র তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। ইসলামপন্থী মহল প্রশ্ন তুলছে, আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিও কি এখন ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে একই ভাষায় কথা বলছে?

অতীতের বক্তব্য বনাম বর্তমান বিতর্ক

২০০৫ সালে ছাত্রশিবিরের এক অনুষ্ঠানে ‘মৌলবাদ’ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছিলেন, ‘আমি একজন প্রকৃত মুসলমান, ইসলামের মূলনীতিতে বিশ্বাস করি। আমাকে যদি কেউ মৌলবাদী বলে, তাতে কি আসে যায়।’

তিনি বলেন, ‘একজন খৃষ্টান যদি তার মূল ধর্ম পালন করে, একজন হিন্দু যদি তার মূল ধর্ম পালন করে, তাহলে সেওতো মৌলবাদী।’

এছাড়া, ৯ মে ২০১৭ সালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সাবেক চেয়ারপার্সন ও সাকেব প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘মৌলবাদী বলতে কিছু নেই, বাংলাদেশে যেসব ধর্মীয় ব্যক্তি আছেন, তারা বাংলাদেশকে ভালোবাসেন। তাদের অবদান আছে দেশের জন্য এবং তারা দেশকে রক্ষা করতে চান। মৌলবাদী বলে কিছু নেই এখানে।’

অতীতে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব যেখানে ‘মৌলবাদ’ শব্দের বিরোধিতা করেছিলেন, সেখানে এখন তারেক রহমানের বক্তব্যকে অনেকে অবস্থান পরিবর্তন হিসেবে দেখছেন।

সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ

ফেসবুকে ইসলামপন্থী কর্মী ও লেখকরা একের পর এক ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। লেখক মুফতি মুহিউদ্দিন কাসেমী লিখেছেন, ‘চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি নিয়ে না বলে মৌলবাদ নিয়ে কথা কেন? নামাজ পড়া, দাড়ি রাখা, টুপি পরা কি চরমপন্থা? মূল সমস্যার দিকে ফোকাস করুন।’

আরেকজন ব্যবহারকারী ইমরান হোসাইন মন্তব্য করেন, বিএনপি আজ বামপন্থীদের কণ্ঠে কথা বলছে, যা দলের ঐতিহ্যবাহী ডানপন্থী ভিত্তির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তার মতে, ‘বিএনপির স্রোতধারা কখনো বামপন্থী ছিল না, বরং দক্ষিণপন্থী। স্রোতের উল্টোদিকে চলতে গিয়ে তলিয়ে যাবে বিএনপি।’

ইসলামপন্থী নেতাদের প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর ও হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বিএনপির প্রতি সতর্কবার্তা দিয়ে বলেন, ‘বিএনপি যদি ইসলামপন্থীদের আনুকূল্য হারায়, তবে সেটি তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবে। দলের রাজনীতি দক্ষিণপন্থার ভিত্তিতেই গড়ে উঠেছে। তাই ইসলামি মূল্যবোধ উপেক্ষা করলে স্থায়িত্ব পাওয়া কঠিন।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাম্প্রতিক ‘দক্ষিণপন্থীদের উত্থান’ নিয়ে মন্তব্যকেও তিনি অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেন।

কেন বিতর্ক?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ‘রাজাকার’, ‘মৌলবাদী’, ‘চরমপন্থী’ ইত্যাদি শব্দ একসময় আওয়ামী লীগ ব্যবহার করতো ইসলামপন্থীদের কোণঠাসা করার জন্য। বিএনপি একই শব্দ ব্যবহার শুরু করলে, স্বাভাবিকভাবেই তাদের ঐতিহ্যগত সমর্থনভিত্তি—ধর্মপ্রাণ জনগোষ্ঠী—ক্ষুব্ধ হবে।

এক কালে যারা বিএনপিকে ভালোবাসতো, তাদেরই কাছে এখন দলটি আওয়ামী লীগের মতো শোনাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। আর এর ফলে সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ দিন দিন আরও বাড়ছে।

বিএনপি নেতৃত্বের সাম্প্রতিক বক্তব্যে ইসলামপন্থীদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে, যা দলের রাজনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকেই।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দলটি যদি আবারো ‘মৌলবাদী’ শব্দকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে, তবে ধর্মপ্রাণ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

হাআমা/

banner

এ জাতীয় আরো সংবাদ

প্রকাশক: আবু সায়েম খালেদ
পরিচালক: এইচ. এম. মুহিউদ্দিন খান
আসকান টাওয়ার, ৬ষ্ঠ তলা, ১৭৪ ধোলাইপাড়
যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪
ইমেইল: info@36news24.com
ফোন: 01401 400222