মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ডকে নিয়ে কেউ কেউ আশাবাদী ছিলেন। তাদের ধারণা ছিল, ট্রাম্পের মাধ্যমেই অবসান ঘটবে মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের। কিন্তু তাদের এই দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্বিবেচনা করা উচিৎ। সেজন্য অধিকৃত পশ্চিমতীরের বর্তমান অবস্থা দেখলেই যথেষ্ট হবে বলে মনে করি।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে বন্দী বিনিময় করছে ইসরাইল ও হামাস। ইন্টারন্যাশনাল রেড ক্রিসেন্ট কমিটির কাছে বন্দীদের হস্তান্তর করছে উভয় পক্ষ। ইসরাইলি বন্দীদের বহনকারী গাড়িকে সুসজ্জিত হামাস যোদ্ধারা পাহারা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এ দেখে ইসরাইলি বাহিনীর ক্ষোভের নেই শেষ। তারা জেনিনে হামলা করে এর খেদ মেটানোর চেষ্টা করছে।
ইসরাইলি সাংবাদিক ইসরাইলি ফ্রে বলেন, সেনাবাহিনী ভিত্তিহীন বর্ণনা দিয়ে জনসাধারণকে পক্ষে রেখেছে। তারা এতদিন কেবল নিজেদের বিজয়গাঁথা ও প্রতিশোধের গল্প শুনিয়ে এসেছে। কিন্তু সদ্য মুক্তি পাওয়া বন্দীদের ঘিরে হামাসের এমন আয়োজন তাদের হতবাক করেছে। গুঁড়িয়ে দিয়েছে দীর্ঘ ১৬ মাস ধরে গড়ে তোলা সেনাদের বিজয়ের মিথ। গাজা থেকে তারা যখন টয়োটা ও সশস্ত্র হামাস যোদ্ধাদের বের হতে দেখেছে, তারা বুঝে সেনাবাহিনী এতদিন তাদের মিথ্যা বুঝ দিয়েছিল।
তবে পশ্চিমতীরের শরণার্থী শিবিরে এই বৃহৎ স্থল আক্রমণ ছিল পূর্বপরিকল্পিত। এর মাধ্যমে যেন অতিডানপন্থী অর্থমন্ত্রী এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরের ডি ফ্যাক্টো কনসাল জেনারেল বেজালেল স্মোট্রিচকে মন্ত্রিসভায় ধরে রাখা যায়। কারণ, তিনি গাজায় যুদ্ধবিরতির কারণে পদত্যাগের হুমকি দিয়েছিলেন। এছাড়া তিনি সেনা নেতৃত্বকে নির্মূল করারও ভয় দেখিয়েছিলেন।
যদি আপনি মনে করেন যে চলতি সপ্তাহে পদত্যাগকারী ইসরাইলের শীর্ষ জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল হার্জি হালেভি গাজায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানার পরবর্তী অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট কাজ করেছেন, তাহলে তার স্থলাভিষিক্ত ব্যক্তিদেরও নজরদারি করা উচিত।
ইসরাইলের স্বপ্নের সম্পর্কের পুনরাবৃত্তি
ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে প্রশাসন সাজিয়েছে। তার প্রশাসনে নজর দিলে কেউ অস্বীকার করবেন না যে ইসরাইল প্রথম মেয়াদে ট্রাম্পের কাছে যেই আশাবাদ রেখেছিল, তা পূরণে ট্রাম্প সকল বন্দোবস্ত করে দিয়েছে। তিনি প্রথম মেয়াদে দখলকৃত গোলান হাইটসকে সংযুক্ত করার অনুমতি দিয়েছিলেন। যা নিয়ে সিরিয়ার সাথে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে ইসরাইলের। তিনি ফিলিস্তিনিদের স্বার্থকে কবর দেয়ার জন্য আব্রাহাম চুক্তিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। এছাড়া জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর করে শহরটিকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।
দ্বিতীয় মেয়াদেও ট্রাম্প ইসরাইলি স্বার্থই রক্ষা করছেন। তিনি মাইক হাকাবিকে মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দিয়েছেন। অথচ হাকাবি মনে করেন, ফিলিস্তিন বলতে কিছু নেই। ফিলিস্তিনিদের অস্তিত্বও অস্বীকার করেন তিনি। পিট হেগসেথকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে প্রতিরক্ষা সচিব হিসেবে। অথচ তিনি বলেছিলেন, আল আকসা মসজিদের ধ্বংসাবশেষের উপর ইহুদিদের তৃতীয় মন্দির তৈরি করা উচিত। স্টিভ উইটকফ হয়েছেন শান্তি দূত। অথচ তিনি গাজাবাসীদের ইন্দোনেশিয়ায় স্থানান্তরিত করতে চান।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, ট্রাম্প নিজেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তিনি সাত মিলিয়ন ফিলিস্তিনির ভাগ্যের জন্য এক বিন্দুও চিন্তা করেন না। ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার তো গাজাকে বিশ্বের বৃহত্তম ধ্বংসস্তূপ হিসেবে দেখতে আগ্রহী। এর বিনিময়ে তিনি গাজার সমুদ্র দখলে নিতে চান। সেখানে দুর্দান্ত কিছু করতে চান। অথচ গাজাবাসীদের নিয়ে তার বিন্দুমাত্র উদ্বেগ নেই।
সত্যি বলতে, ট্রাম্প ধনী বা দরিদ্র কোনো আরব দেশের জন্যই আন্তরিক নন। এমনকি সৌদি আরবের প্রতি তার সহানুভূতি ঠিক ততটাই, ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান তার পকেট যতটুকু খুলতে ইচ্ছুক। প্রথম বিদেশ সফর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে ট্রাম্প রিয়াদে যাওয়ার কথা বলেছিলেন। কারণ, সৌদি আরব মার্কিন পণ্যের জন্য ৪৫০ বিলিয়ন ডলার রেখেছিল।
মোটকথা, গাজায় গণহত্যার প্রতি উদাসীন, আনুগত্যের মানদণ্ডে শতভাগ উত্তীর্ণদের নিয়ে পরিষদ গঠন, কঠোর ইসরাইলপন্থীদের প্রধান্যদান ইত্যাদির কারণে প্রশ্ন জাগে, ট্রাম্প কি আবারো ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জন্য নিখুঁত ফয়েল হিসেবে কাজ করবেন? নেতানিয়াহুর উত্তরাধিকার নীতি কি আসলেই ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সম্ভাবনা অঙ্কুরেই নষ্ট করে দেবে?
আমি যে উত্তরে উপনীত হচ্ছি, তা কিছুটা মিশ্র। ট্রাম্প ও জায়নবাদের আধিপত্য জাগরণের পেছনে একটি পূর্ণ ইসরাইলি রাষ্ট্র গড়ার স্বপ্ন কাজ করেছে। বর্তমানে ইসরাইলের একটি বৃহত্তর অংশ দখল করে আছে এই জায়নবাদীরা। এটি ২০১৭ সাল বা তার আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এটি প্রতিষ্ঠিত বাস্তবতা। এদিকে, পশ্চিমতীরকে কার্যত ইসরাইলই নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা সীমান্তকে পুলিশের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করছে। সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ স্তরকেও সেখানে যুক্ত করেছে। মোটকথা, পূর্ণ ইসরাইলি রাষ্ট্রগঠন এখন মন্ত্রিসভার একটি কণ্ঠস্বর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বাস্তবতা উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। এ কারণেই ডেমোক্র্যাট ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট বানানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। সেজন্য ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে নিষ্ঠাবান আনুগত্য আশা করা সম্পূর্ণ ন্যায্য।
এই সবই সত্য। কিন্তু ট্রাম্প বা নেতানিয়াহু কেউই এমন পৃথিবীতে বাস করছেন না যেটা তারা ২০১৭ সালে আয়ত্ত করে ফেলেছিলেন বলে মনে করেছিলেন। নিজের কথা বাদ দিলে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করা ইসরাইল এই অঞ্চলে এবং ট্রাম্পের জন্য অস্থিরতার উৎস হতে পারে, যেমনটি বাইডেনের কাছে ছিল।
বৃদ্ধদের জন্য কোনো দেশ নেই
নেতানিয়াহু হয়তো গত বছরের জুলাইয়ে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার জন্য উইটকফের সাথে তার সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকে একটি অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। তবে এখন তা করার জন্য ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ কারণও রয়েছে।
জরিপগুলো আপাতদৃষ্টিতে পরস্পরবিরোধী। ৬২ শতাংশ ইসরাইলি বিশ্বাস করেন যে গাজায় কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি নেই। সেজন্য ফিলিস্তিনিদের প্রতি তাদের মনে কোনো সহানুভূতির নেই। এদিকে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ইসরাইলি যুদ্ধের অবসানকে সমর্থন করেন। কারণ, ইসরাইলি সেনা ও আহতদের জীবন, অর্থনীতি ও পশ্চিমা জীবনযাত্রার উপর যে আঘাত এসেছে, তার অবসায়ন চাচ্ছিল তারা। এই প্রজন্ম এসব স্বাধীনতাকে নিজেদের জন্মগত অধিকার বলে মনে করে। এছাড়া যুদ্ধটা সরকার, সেনাবাহিনী এবং সামগ্রিকভাবে সমাজের উপর এক ভারী বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যুদ্ধের পর ইসরাইলি সমাজ আগের চেয়ে অনেক বেশি বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এর উপর বন্দীদের পরিবারের সাপ্তাহিক বিক্ষোভ সরকারের উপর আলাদা চাপ সৃষ্টি করেছিল। ফলে যুদ্ধের কারণে অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ এমন পর্যায়ে উপনীত হয়েছে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি।
লেবাননে যুদ্ধবিরতি নেতানিয়াহুর উপর চাপ কমাতে পারেনি। বরং আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। আর নেতানিয়াহু এখন তার মেয়াদের অর্ধেক পার করে ফেলেছেন। এই চাপ যদি শামাল দিতে না পারেন, তাহলে তার আগামী মেয়াদের ক্ষমতায় আসাটা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। সেজন্যও তিনি যুদ্ধের চাপ কমাতে সম্মত হয়েছেন।
৭ অক্টোবরের হামলার জন্য তার দায় একপাশে রাখুন। এর বাইরে ৪০০ জনেরও বেশি সৈন্য মারা গেছে এবং হাজার হাজার আহত হয়েছে। গাজার ধ্বংসস্তূপে হামাস যদি বিকাশ লাভ করতে থাকে, তাহলে তারা কী কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে?
কিন্তু জরিপ অনুসারে, যদি ইসরাইল যুদ্ধ-ক্লান্ত হয়, তাহলে কেন তারা পশ্চিমতীরে আরেকটি অভিযান শুরু করছে এবং কেন তারা বর্তমানে গাজার চেয়ে বেশি সিরিয়ার ভূখণ্ড দখল করেছে?
আংশিক দখল
নেতানিয়াহু ওয়াশিংটনের মনোভাব খুব ভালো বিশ্লেষণ করতে পারে। সেজন্য শুরুতেই তিনি ট্রাম্পের মনোভাব পড়ে নিয়েছেন। তিনি বুঝে নিয়েছেন যে ট্রাম্প ইসরাইলি বন্দীদের মুক্তির জন্য মূলত যুদ্ধবিরতি চাচ্ছে। সেজন্য যদি বন্দীরা মুক্তি পেয়ে যায় অথবা তাদের বেশিরভাগই ছাড়া পেয়ে যায়, তাহলে ট্রাম্পের পক্ষ থেকে আর কোনো বাধা থাকবে না। তখন গাজা বা পশ্চিমতীরে যা ইচ্ছে, তা-ই করতে পারবে।
ওভাল অফিসে নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করার সময় যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে ট্রাম্প বলেন, এটি আমাদের যুদ্ধ নয়। এটি তাদের যুদ্ধ। আমি আত্মবিশ্বাসী নই। তবে আমি মনে করি তারা অন্যদিকে খুবই দুর্বল।’
দ্বিতীয়ত, পশ্চিমতীরে সামরিক আক্রমণ এবং হালেভির স্থলাভিষিক্তকরণ স্মোট্রিচকে পাশে রাখার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। কারণ, স্মোট্রিচ এ বিষয়ে বেশ স্পষ্টবাদী। তিনি বলেছেন যে আসন্ন সময় গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ পুনরায় শুরু করার প্রস্তুতির জন্য সিনিয়র সামরিক নেতৃত্বের স্থলাভিষিক্তকরণের সাক্ষী হবে।
এছাড়া টিম ট্রাম্প আংশিক সংযুক্তির প্রস্তুতির জন্য পশ্চিমতীরের শরণার্থী শিবির ভেঙে ফেলার জন্য একটি অভিযানের সাথেও জড়িত।
জাতিসঙ্ঘে ট্রাম্পের মনোনীত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এলিস স্টেফানিক বিশ্বাস করেন যে জুডিয়া এবং সামেরিয়ার উপর ইসরাইলের বাইবেলের আধিপত্য রয়েছে। ফিলিস্তিনিদের জনগণ হিসেবে কোনো অধিকার নেই। তারা অবশ্যই তার দৃষ্টিতে ইসরাইলিদের মতো নয়।
নেতানিয়াহুর উদ্দেশ্যকে কেবল এখানেই সীমাবদ্ধ রাখা বোকামি হবে। তিনি জানেন যে জেনিনে তার পদক্ষেপ কেবল শহরটিকেই ধ্বংস করবে না। বরং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকেও ধ্বংস করবে – যা ইতিমধ্যেই লাইফ সাপোর্টে রয়েছে।
জেনিন, তুলকার্ম, নাবলুস এবং অন্যান্য সকল প্রতিরোধ কেন্দ্র ধ্বংস করার ক্ষেত্রে ইসরাইলি সামরিক যন্ত্রের সাথে এটি টিকে থাকতে পারবে না।
আমরা আশা করতে পারি যে এর সশস্ত্র এবং প্রশিক্ষিত প্রিভেন্টিভ সিকিউরিটি ফোর্স থেকে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক বিদ্রোহী দলত্যাগ দেখতে পাবে। যেমনটি আমরা দ্বিতীয় ইন্তিফাদায় দেখেছি। এই বিষয়টিও নেতানিয়াহু ভালো করেই জানেন।
ইসরাইলের সবচেয়ে বড় অ্যাকিলিসের হিল
যুদ্ধপরবর্তী অবস্থায় নেতানিয়াহু পশ্চিমতীর ও গাজাকে যেভাবে দেখতে চান, তার জন্য তাকে আগের পলিসিতে ফিরে যেতে হবে। আবার প্রত্যেক শহর ও সম্প্রদায়ের নেতাদের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। তবে এখন পশ্চিমতীর গাজার মতো ইসরাইলি সামরিক শাসনের অধীনে চলে যাবে। তবে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের সাথে এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে।
গাজায় যে বর্বরতা দেখানো হয়েছে, তাতে ইসরাইল কেবল মার্কিন ইহুদিদের একটি পুরো প্রজন্মকেই হারায়নি। বরং তারা পুরো অঞ্চলের সহানুভূতি ও সমর্থনও হারিয়েছে, যা ৬ অক্টোবর ফিলিস্তিনিদের স্বার্থকে যত গভীরে ফেলে দিতে পারে তার প্রতিটি লক্ষণ দেখিয়েছে।
সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে এক নতুন প্রজন্মের স্বৈরশাসক ক্ষমতায় এসেছিলেন, যারা ফিলিস্তিনি স্বার্থের প্রতি মৌলিকভাবে উদাসীন ছিলেন। গাজা ধ্বংস করার আগে ইসরাইল পূর্ণ বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে ছিল।
ইসরাইল যে আরবদের মধ্যে বাস করে, তাদের ভুল বোঝার ক্ষমতা তার সবচেয়ে বড় অ্যাকিলিস হিল।
ইসরাইল এখনো এই সত্যটি হজম করতে পারেনি যে গাজার বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ পুরো আরব প্রজন্মকে এতটাই উজ্জীবিত করেছে যে ইসরাইলের সংক্ষিপ্ত ও তিক্ত এই ইতিহাসে এর আগে এমন পরিস্থিতি কখনো দেখা যায়নি।
তেল আবিবের রাস্তায় ছুরি হামলায় নিশ্চিত মৃত্যুর জন্য আমেরিকায় স্থায়ী বসবাসের গ্রিন কার্ডের সোনার ধুলো ত্যাগ করতে একজন মরক্কোকে আর কী অনুপ্রাণিত করবে? মরক্কো আব্রাহাম চুক্তিতে উৎসাহী স্বাক্ষরকারী ছিল। এখন সেই কাগজের টুকরোটির দাম কত?
ইসরাইল যে অঞ্চলে বাস করে সে সম্পর্কে এতটাই অজ্ঞ যে খেলার মাঠে সবচেয়ে বড় দালাল হিসেবে কাজ করা ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে মাথা ঘামানোর যোগ্য বলেও মনে করে না।
কিন্তু পশ্চিমতীরের জন্য যদি তারা তাদের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যায়, তাহলে ইসরাইল জর্ডানের ৬০ লাখ ফিলিস্তিনি এবং পূর্বতীরের লক্ষ লক্ষ বাসিন্দাকে আগের চেয়ে আরো উগ্রপন্থী করে তুলবে।
ট্রাম্পের মার্কিন সেনাবাহিনীকে পদক্ষেপ নিতে হবে, কারণ এই অঞ্চলে তাদের এত সম্পদ এবং ঘাঁটি রয়েছে যা তাদের আয়োজক দেশের স্থানীয় জনমতের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি অসংখ্যবার এই পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন এবং তাদের উপেক্ষা করা হয়েছে। সাফাদি বলেন, পশ্চিমতীর আমাদের সীমান্তে অবস্থিত এবং পরিস্থিতি বিপজ্জনক। সেখানে যা ঘটছে তা এই অঞ্চলের নিরাপত্তাকে অস্থিতিশীল করতে পারে।
জর্ডানের পতন ঘটলে ট্রাম্প উপেক্ষা করার অবস্থানে থাকবেন না। তার প্রতিবেশীদের কেউই তা করবে না। এটি কেবল ‘তাদের’ সমস্যা হবে না। বরং তারও সমস্যা হবে। এটি এই অঞ্চলে সমগ্র মার্কিন সামরিক পদচিহ্নের জন্য হুমকিস্বরূপ হবে।
আমরা এমন একটি মার্কিন প্রশাসনের সাথে মোকাবিলা করছি, যার কোনো ধারণা নেই যে ফিলিস্তিনিরা কে বা কী। একজন পুরুষ ও একজন নারীর কাছে তারা এই অঞ্চলটিকে ইসরাইলের প্রিজমের মাধ্যমে দেখে।
আমেরিকা সবসময়ই এটা করে এসেছে। কিন্তু আজকে দূরদর্শিতা আরো বেশি। এটি বিপর্যয়ের একটি রেসিপি এবং ভবিষ্যতে আরো অনেক সঙ্ঘাতের বীজ বপন করছে। ট্রাম্প যে যুদ্ধবিরোধী মঞ্চের উপর দাঁড়িয়েছিলেন তা শিগগির একটি দূরবর্তী স্মৃতি বলে মনে হবে।
সূত্র : মিডল ইস্ট আই