রমজান মাসে মুড়ি মাখা – একটি ঐতিহ্য
পবিত্র রমজান মানেই বাংলাদেশের রাস্তায় রাস্তায় বিক্রেতাদের গরম গরম জিলাপি বিক্রি, পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনির সাথে মজার মুড়ি মাখা। সরিষার তেল, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, ছোলা দিয়ে তৈরি মুড়ি মাখা অনেকেরই ইফতারির টেবিলের অমূল্য অংশ। কিন্তু আধুনিকতার যুগে মুড়ির সাথে জিলাপি মেশানো নিয়ে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। একদিকে পুরনো ঐতিহ্য, অন্যদিকে নতুনত্বের খোঁজ—তাহলে মুড়ির সাথে জিলাপি কি মিশবে?
জিলাপি বিরোধীরা কি বলছেন?
তারা যুক্তি দেন, মুড়ি মাখা একটি হালকা খাবার, আর জিলাপি হলো এক ধরনের চিনির বোমা! দুটি খাবারের মিশ্রণে স্বাদের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তারা বলেন, জিলাপির আঠালো ভাব মুড়িকে নরম করে ফেলে, যা অনেকের কাছে অগ্রহণযোগ্য। বিশেষ করে, মুড়ির মচমচে ভাব মিশে গেলে সেটি অদ্ভুতভাবে নরম হয়ে যায়, যেটি অনেকের জন্য অস্বস্তিকর। এর সাথে ঐতিহ্যও যুক্ত—আগে মুড়ির সাথে লবণ, পেঁয়াজ, সরিষার তেলই ছিল। এখন যদি জিলাপি, বা আরও কিছুর সাথে মেশানো হয়, তা কী সত্যিই যুক্তিসঙ্গত?
জিলাপি প্রিয়দের যুক্তি
অন্যদিকে জিলাপি প্রিয়রা বলছেন, কেন না? ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের সাথে আইসক্রিম খাওয়া যায়, তাহলে মুড়ির সাথে জিলাপি কেন যাবে না? তাদের মতে, মিষ্টি ও নোনতার মিশ্রণ নতুন স্বাদের সৃষ্টি করে, যা অনেকেই পছন্দ করেন। ইফতারি তো অনেক বড় ব্যাপার—কত খাবার সাজাতে হয়, প্লেট ভর্তি খাবার দিতে হয়, আর যদি মুড়ির সাথে জিলাপি মিশিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে তো কাজ সহজ হয়ে যায়। তাদের মতে, মিষ্টি আর নোনতার মিশ্রণ নতুন কিছু তৈরি করে, এবং এটি সময় বাঁচানোরও একটি উপায়।
অবশেষে এটা কি ঐতিহ্য, নাকি বৈচিত্র্যের অনুসন্ধান?
মুড়ি মাখায় জিলাপি মেশানো কি এক নতুন অভিজ্ঞতা, নাকি এটি এক প্রকার ঐতিহ্যের অবমাননা? প্রশ্নটা আসলে নির্ভর করে আপনার ব্যক্তিগত পছন্দের ওপর। কিছু মানুষ ঐতিহ্য রক্ষা করতে চান, আবার অন্যরা নতুনত্বে বিশ্বাসী। তবে একটি কথা নিশ্চিত—ইফতারের আসল সৌন্দর্য মিলেমিশে খাওয়াতেই আছে। তাই, কোনোরকম পরিবর্তন আনার আগে, হয়তো একটু ভাবনা-চিন্তা করে নেওয়া উচিত, না হলে খাবারের উপর রীতিমত যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে!
এনএ/