হাসান আল মাহমুদ >>
সম্প্রতি বাংলাদেশে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত কিছু সুপারিশ প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে, বিশেষ করে ইসলামি দলগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবনাগুলোতে এমন কিছু সুপারিশ রয়েছে যা ইসলামি শরিয়াহ, কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক পারিবারিক আইন এবং দেশের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে দাবি করেছেন আলেমসমাজ ও ইসলামি দলের নেতারা।
ইসলামবিরোধী প্রস্তাবনার বিরুদ্ধে যুক্তিপূর্ণ অবস্থান
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমীর আল্লামা সরোয়ার কামাল আজিজী এবং মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “নারী উন্নয়নের নামে এই কমিশনের প্রস্তাবগুলো বাস্তবিকপক্ষে নারী সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে। বিশেষত, যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান, পতিতাবৃত্তিকে ‘পেশা’ হিসেবে ঘোষণা, নারী-পুরুষের তথাকথিত ‘সমান অধিকার’ প্রতিষ্ঠার নামে উত্তরাধিকার আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান—এসব প্রস্তাব ইসলাম, সংস্কৃতি এবং সংবিধানকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো।”
তারা বলেন, “ইসলামে যৌনকর্মীর কোনো স্থান নেই। ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা পতিতাবৃত্তিকে নিশ্চিহ্ন করার দায়িত্ব পালন করে। অথচ এই কমিশন পতিতাবৃত্তিকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে চায়—এটি চরম অসভ্যতা।”
ইসলামী আন্দোলনের ভাষ্য: ‘ধর্মীয় অবক্ষয় ঘটাতে ষড়যন্ত্র’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, “এই কমিশনের অনেক প্রস্তাবই এমন যে, তা ইসলামী রীতিনীতি ও ধর্মীয় বিধানকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে। তারা যে সমাজ কল্পনা করছে, তা পাশ্চাত্যের নীতিহীন, ধর্মহীন একটি নকল সংস্কৃতি। এটা বাংলাদেশের জন্য নয়।”
তিনি আরও বলেন, “এই কমিশনের মাধ্যমে সরকার কি এমন একটি পরিবারব্যবস্থা চায়, যেখানে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বিশ্বাসহীনতার ভিত্তিতে গড়ে উঠবে? যেখানে স্ত্রী স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করতে পারে, কিংবা সন্তানকে নিজের ইচ্ছামতো সম্পত্তি দিতে পারবে, শরিয়াহ অনুযায়ী নয়? এটি একটি নৈতিক ধস। এ প্রস্তাব আমাদের ঈমান, নৈতিকতা, সামাজিক বন্ধন—সবকিছুকে ভেঙে ফেলবে।”
খেলাফত মজলিসের তীব্র নিন্দা ও কমিশন বিলুপ্তির দাবি
খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, “এই কমিশনের প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নের প্রস্তাব—যা ইসলামি উত্তরাধিকার আইন বাতিলের চেষ্টা। এটি আল্লাহর বিধান বাতিল করার সামিল, এবং কোনো মুসলমান তা কখনোই মেনে নিতে পারে না।”
তারা বলেন, “একটি কমিশনের পেছনে বসে থাকা কিছু ব্যক্তি কাদের প্রতিনিধি? তারা কি সত্যিই দেশের নারী সমাজের চিন্তা, চেতনা ও জীবনবোধকে প্রতিনিধিত্ব করে, নাকি আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নারীবাদী এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত?”
প্রতিবাদ শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি আদর্শের লড়াই
প্রতিবাদরত ইসলামপন্থী দল ও সংগঠনগুলো বলছে, বিষয়টি কেবল রাজনৈতিক কোনো অবস্থান নয়, বরং এটি একটি আদর্শের লড়াই। ইসলামী বিধান ও পারিবারিক মূল্যবোধকে অক্ষুণ্ন রাখাই তাদের আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য।
দেশের একটি বড় অংশের ধর্মপ্রাণ জনগোষ্ঠী মনে করছে, এই কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত হলে সমাজে অস্থিরতা, পারিবারিক অবক্ষয় এবং বিশ্বাসের সংকট সৃষ্টি হবে।
সরকারের প্রতি আহ্বান: শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্বশীল ভূমিকা গ্রহণ করুন
বিভিন্ন ইসলামপন্থী দল সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে—এই বিতর্কিত প্রস্তাবগুলো অবিলম্বে প্রত্যাহার করে কমিশনকে বিলুপ্ত ঘোষণা করতে হবে। অন্যথায় তারা আগামী দিনগুলোতে রাজপথে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের অবস্থান জানান দেবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
হাআমা/