শরীফ মুহাম্মদ >>
প্রাইম-এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারভেজের হত্যার ঘটনাটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও নির্মম। বাহ্যত অকারণে কিংবা অতি তুচ্ছ কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
ক্যাম্পাসের সামনে বসে থাকা তরুণ পারভেজ তারই বয়সী আরেক তরুণীকে সামনে দিয়ে আসতে দেখে হেসেছিল; মুখে কিছু বলেনি। এতে ওই তরুণী রুষ্ট হয় এবং তার বন্ধুদের ডেকে আনে। তাদের আক্রমণে ও ছুরিকাঘাতে পারভেজ নিহত হয়। এইটুকুই হচ্ছে মূল ঘটনা।
প্রশ্ন হলো, এখানে এমন কী ঘটলো যে কারণে ছেলেটাকে হত্যা করার মতো করে আঘাত করতে হলো? এটা না উল্লেখ করার মতো কোনো ইভটিজিংয়ের ঘটনা ছিল, না কোনো নারী অবমাননার ঘটনা। তাহলে কী হলো? বিষয়টা বোঝা দরকার।
তরুণী ও নারীদের বিষয়ে এদেশে কি হঠাৎ করেই অতিরিক্ত স্পর্শকাতরতা ও অতি উচ্চতার (সেন্সিটিভিটি ও সুপিরিয়রিটি) ধারণা ব্যাপক করে তোলা হয়েছে?
গত রমজানের শুরু থেকে প্রকাশ্যে এক তরুণীর সিগারেট পানে প্রতিবাদ, এক নারী শিক্ষার্থীকে ওড়না পরতে বলা এবং এ জাতীয় আরো কিছু ঘটনা সামনে আসে। এসব ঘটনায় নারী অধিকার ও সম্মানের এত বেশি উগ্র চর্চা হয়েছে যে ধারণা করা যায়, তরুণীদের মনের মধ্যে অতি নারীবাদী জাগরণের চাষবাস ঘটেছে। বাড়তি ইগো ও সম্মানবোধ অল্প বয়সী অনেক শহুরে নারীর মধ্যে মারমুখি একটা মেজাজ তৈরি করেছে। অল্পতেই তারা অপমানিত বোধ করছে এবং এসপার-ওসপার করার চেষ্টায় লিপ্ত হচ্ছে। পারভেজ হত্যার ক্ষেত্রেও সম্ভবত এমন ঘটনাই ঘটেছে।
এটা এক ভয়াবহ সামাজিক ভারসাম্যহীনতা ও জটিলতা, যেখান থেকে তরুণ-তরুণী, নারী-পুরুষ সবার বের হয়ে আসা উচিত। নারীর সম্মান, মর্যাদা, অধিকার, শালীনতা ও সম্ভ্রম প্রশ্নোর্ধ একেকটি ইস্যু। একই সঙ্গে নারী-পুরুষের সম্মানজনক সহাবস্থান ও বিচরণের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। এসব নিয়ে ভিন্নমত থাকার কোনো সুযোগ নেই।
কিন্তু দ্বিপাক্ষিক ও পারস্পরিক সম্পর্ক-সহাবস্থানের একটি অপরিহার্য নিয়ামক হলো, পারস্পরিকতার সূত্রগুলোর মধ্যে ভারসাম্য ঠিক রাখা, কোনো একদিকে অতিরিক্ত জোর/চাপ না দেওয়া। সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে ঘটেছে উল্টোটা। নারীবাদী জাগরণের ভেতর এই ভারসাম্য ভাঙ্গার অগণিত উপাদান রেখে দেওয়া হয়েছিল।
এজন্যই এক তরুণীকে দেখে এক তরুণের হেসে দেওয়ার কারণে সেই তরুণী সেটা নিতে পারেনি। তরুণী প্রচন্ড অপমান বোধ করেছে এবং তার ইগোর কারণে প্রতিশোধ নেওয়াটা অপরিহার্য মনে করেছে। তার আহবানে ছেলে বন্ধুরা এসে মানুষ খুন করে সেই জাগ্রত ইগোর দাবি পূরণ করেছে। সম্ভবত পারভেজ এভাবেই নিহত হয়েছে। ঘটনার বাহ্যিক বর্ণনা থেকে এটাই মনে হয়েছে অন্তর্গত কারণ। সামনের সময়ে আরো ব্যাখ্যা আসতে পারে।
সম্প্রতি নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের যে প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার হাতে জমা পড়েছে, সেটিও নারীবাদ ও ধর্মবিদ্বেষ ইস্যুতে প্রবল প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভের মুখে পড়েছে। পুরুষবিদ্বেষী অতি নারী জাগরণের উস্কানি যতদিক থেকে যতদিন চলবে, এজাতীয় বেদনাদায়ক ঘটনা- দুর্ঘটনার আশঙ্কা সম্ভবত ততটাই বাড়বে। তাই নারী-পুরুষ সম্পর্কের এই সামাজিক দিকটি নিয়ে সচেতন ও চিন্তিত হওয়া দরকার। আশা করা যায়, নারী-পুরুষের পর্দা শালীনতা ও সম্ভ্রমগত সম্মানের মাত্রা বৃদ্ধি করলে জাতীয় সমস্যা অনেক কমে যাবে, ইনশাআল্লাহ।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হওয়া উচিত। দলকেন্দ্রিক পক্ষপাত ও বিরোধিতার বাইরে এসে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত। এই ঘটনা নিয়ে দুটি পরিচিত ছাত্র সংগঠনের পক্ষে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে আক্রমণাত্মক এবং আত্মরক্ষামূলক অবস্থান গ্রহণের বিষয়টি দৃষ্টিকটু। এটা কোনো রাজনৈতিক ঘটনা ছিল না, এখানে প্রকৃত অপরাধীদের বিচার দাবি করাই উভয় পক্ষের অবস্থান হওয়া উচিত। একই সঙ্গে উচিত নারী-পুরুষ সম্পর্কের সম্মান ও দূরত্ব এবং পারস্পরিক মর্যাদার বিষয়গুলো সম্পর্কে সবার সচেতন হওয়া।
এআইএল/