আমিরুল ইসলাম লুকমান >>
রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে বুধবার (২৩ এপ্রিল) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে প্রীতি সমাবেশে বিতর্কিত সাংবাদিক দৈনিক কালবেলার সম্পাদক সন্তোষ শর্মার উপস্থিতি ও বক্তৃতা করা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক তোলপাড় চলছে। জামায়াতে ইসলামীর আদর্শ ও নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। রাজনৈতিক দলের কর্মী, আলেম সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও ফেসবুক এক্টিভিস্টদের অনেকে নানা প্রশ্ন, বিরূপ মন্তব্য ও তিরস্কার জানিয়ে পোস্ট করেছেন।
সন্তোষ শর্মার বিরুদ্ধে বিগত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের চাটুকারিতা, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র-এর এজেন্ট হয়ে কাজ করা, সরকারী বা পুলিশ প্রশাসনের লোক না হয়েও রিমান্ডে উপস্থিত হয়ে আলেমদের নির্যাতন করা, নিজের পত্রিকায় বিএনপি-জামাত ও আলেম সমাজের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে লেখালেখি করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
দেশ-বিদেশের যেসব শক্তি ও ব্যক্তির সাহায্যে পলাতক আওয়ামী সরকার জামায়াতে ইসলামীর গুরুত্বপূর্ণ নেতার ফাঁসি দিয়েছে, তাদের সহযোগী হওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে বিএনপি, জামাত-শিবির, আলেম সমাজ ও ধর্মপ্রাণ নাগরিকদের কেউই আওয়ামী লীগের অত্যাচার-নির্যাতন থেকে রেহাই পাইনি। ভয়াবহ অত্যাচারে যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল, তাদের কারো কারো সাথে এখন জামায়াতে ইসলামীর এমন দহরম-মহরম কেউ মেনে নিতে পারছেন না।
এ কারণে উক্ত অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার তুফান বয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। অনেকেই জামায়াতে ইসলামীর এমন কর্মকাণ্ডকে মৌলিক আদর্শচ্যুতি, আদর্শহীনতা, ভারতের বলয়ে ঢুকে যাওয়া, ক্ষমতার জন্য উদগ্রীব হয়ে যাওয়া, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত নিজেদের ত্যাগী নেতাদের ভুলে যাওয়ার উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করছেন।
যদিও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তাকে উক্ত অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয়া হয়েছে। কিন্তু সাধারণ জনগণ জামায়াতে ইসলামীর এই আত্মপক্ষ সমর্থনকে ঠুনকো উত্তর মনে করছেন।
জনপ্রিয় আলেম, এক্টিভিস্ট ও লেখক মাওলানা হারুন ইজহার। প্রকাশ্যে তিনি সন্তোষ শর্মার মুখোশ উন্মোচন করে কথা বলেছিলেন, পাঠক নন্দিত একটি পত্রিকায় সন্তোষ শর্মার অপকর্ম নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন হয়েছিল। নির্যাতিত আলেম হারুন ইজহার লিখেছেন, ‘জামাআতে ইসলামি নিকৃষ্ট মুনাফেকিতে লিপ্ত হয়েছে। দিল্লির ওই …গুলোর (সন্তোষ গং) সঙ্গে ওরা সংসার শুরু করছে।
হে শিবির! হে শহীদ নেতৃবৃন্দের উত্তরসূরীরা! তোমাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এখন।’
আসিফ মুহাম্মদ নামের একজন লিখেছেন, ‘সন্তোষ শর্মার সর্বপ্রথম পরিচয় হচ্ছে সে র-এর সবচেয়ে বড় এজেন্টদের একজন। এরপর সে সম্পাদক, অন্য ধর্মালম্বী, ইত্যাদি। জামায়াতে ইসলামী এই এজেন্টকে দুইবার তাদের প্রোগ্রামে দাওয়াত দিয়েছে। সো তাকে দাওয়াত যে জেনে-শুনেই দেয়া হয়েছে এটা খোদ জাশির এক্টিভিস্টরাই বলছেন। জাশির নেতারা একদিকে জেলখানায়, অন্যদিকে সন্তোষ শর্মা জামায়াতের প্রোগ্রামে অতিথি!’
সাদ আমির নামে আরেকজন লেখক, ফেসবুক এক্টিভিস্ট লিখেছেন, ‘বাংলায় সম্পাদক পরিচয়ের পিছনে লুকিয়ে থাকা র- এজেন্ট সন্তোষ শর্মা, যে ব্যক্তি ডিবির রিমান্ডে আলেমদের জিজ্ঞাসাবাদ করত। ভারতবিদ্বেষী ট্যাগ দিয়ে হুমকি দিত। সাথে থাকত হিন্দিভাষী আরেকজন। প্রমাণ হওয়ার জন্য আরো কিছু দরকার?
কিন্তু জামায়াত তাদের প্রোগ্রামে, এমনকি ইফতার মাহফিলেও র’য়ের এই এজেন্টকে দাওয়াত দিয়েছিল, দিচ্ছে। অজ্ঞতার কারণে এমন হচ্ছে, এটা হতেই পারে না। কিন্তু কেন করতেছে, সেটা আমি বলব না।
এ নিয়ে জামায়াতের কারো কারো মাঝেও ক্ষোভ দেখা গেছে। জামায়াত কি তাদের আপসহীন, যারা ফাঁসিতে ঝুলে, জিন্দাখানার অন্ধকার প্রকোষ্ঠে জীবন দিয়ে দিয়েছেন, তাদের রক্তের সঙ্গে গাদ্দারী করছে না?’
এআইএল/