হাসান আল মাহমুদ >>
ভারতে সদ্য পাস হওয়া ওয়াকফ আইন (সংশোধনী) বিল ২০২৫ নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম সমাজে তীব্র উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আইন কেবল ওয়াকফ প্রশাসনের কাঠামো বদলের নামেই নয়, বরং এর মাধ্যমে ভারতের মুসলমানদের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ভিত্তিকে চিরতরে দুর্বল করার এক সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা।
ওয়াকফ: মুসলিম সমাজের ঐতিহাসিক আত্মপরিচয়ের অংশ
ওয়াকফ সম্পত্তি মূলত মুসলমানদের ধর্মীয়, শিক্ষাগত, চিকিৎসা ও জনকল্যাণমূলক ব্যবস্থার জন্য নিবেদিত সম্পত্তি। এই সম্পত্তিগুলো ব্যক্তি মুসলমান বা মুসলিম সমাজ কর্তৃক আল্লাহর নামে উৎসর্গ করা হয়, যাতে সমাজের দরিদ্র, শিক্ষার্থী, রোগী বা মসজিদ-মাদ্রাসার উপকার হয়। শত শত বছর ধরে এসব সম্পত্তি মুসলিম সমাজের আস্থা ও চেতনার প্রতীক।
কিন্তু নতুন আইনে বলা হচ্ছে, ওয়াকফ সম্পত্তির উপর সরকারের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর করা হবে, যা অনেকেই ধর্মীয় সম্পত্তির রাষ্ট্রীয়করণ হিসেবে দেখছেন।
বিলের বিতর্কিত দিকসমূহ
ওয়াকফ বোর্ডের স্বাধীনতা হ্রাস:
নতুন সংশোধনী অনুযায়ী, ওয়াকফ বোর্ড সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনো বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। এভাবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের সহজ পথ:
সংশোধিত ধারায় কিছু ব্যাখ্যার মাধ্যমে ওয়াকফ সম্পত্তিকে “অব্যবহৃত” ঘোষণা করে সরকার সহজেই তা অধিগ্রহণ করতে পারবে।
আইন প্রয়োগে পক্ষপাতের সুযোগ:
মুসলিম সমাজ আশঙ্কা করছে, এই আইনের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা হতে পারে।
ষড়যন্ত্রমূলক প্রতিচিত্র :
সমালোচকদের ভাষ্যে, এই বিলের উদ্দেশ্য কেবল প্রশাসনিক সংস্কার নয় বরং “ধীরে ধীরে মুসলমানদের ধর্মীয় সম্পত্তির উপর নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নিয়ে তাদেরকে সমাজে প্রান্তিক করে দেওয়া।’ এটি একটি সুপরিকল্পিত ‘মুসলিমশূন্যীকরণ’ কৌশলের অংশ বলে মত দিচ্ছেন অনেক মানবাধিকারকর্মী ও বিশ্লেষক।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভূমিকা :
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছে বিষয়টি তুলে ধরার উদ্যোগ নিচ্ছে কিছু মুসলিম দেশ ও সংগঠন। কারণ ধর্মীয় স্বাধীনতা হরণ ও ধর্মীয় সম্পত্তির দখল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
উল্লেখ্য, ওয়াকফ আইন সংশোধনীর আড়ালে ভারতীয় মুসলিম সমাজের অস্তিত্ব ও পরিচয়ের উপর এক নির্মম আঘাত হানা হচ্ছে কিনা, সেই প্রশ্ন এখন দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিটি মুসলিমের হৃদয়ে দোলা দিচ্ছে। ধর্মীয় সম্পত্তির উপর রাষ্ট্রীয় আধিপত্য মুসলিম সমাজের আত্মমর্যাদা ও আত্মপরিচয়ের ওপর সরাসরি আঘাত। সময় এসেছে আন্তর্জাতিক ফোরামে এই ইস্যুকে জোরালোভাবে উপস্থাপন করার।
হাআমা/