রাত পোহালেই হেফাজতের মহাসমাবেশ, তরুণদের প্রত্যাশায় নতুন বার্তা

by hsnalmahmud@gmail.com

হাসান আল মাহমুদ >>

রাত পোহালেই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বুকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসমাবেশ। আগামীকাল শনিবার সকাল ৯টায় শুরু হবে এই বহুল প্রতীক্ষিত সমাবেশ। হেফাজতের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী ৩৬ নিউজকে জানিয়েছেন, পাঁচ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এই সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন
banner

হেফাজতের পাঁচ দফা দাবি:

১. ফ্যাসিবাদের আমলে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও গণহত্যার বিচার।

২. সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠা।

৩. নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ও কমিশন বাতিল।

৪. ভারতের মুসলমানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ওয়াকফ আইন বাতিল।

৫. ফিলিস্তিনকে দখলদার মুক্ত করার আন্তর্জাতিক উদ্যোগ গ্রহণ।

তরুণদের কণ্ঠে নতুন জাগরণের প্রত্যাশা

হেফাজতের এই সমাবেশকে ঘিরে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে তরুণদের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রস্তাবনা ও আবেগঘন আবেদন দিয়ে। অনেকেই চান, হেফাজতের আগের সংগ্রামী রূপ ফিরে আসুক, শহীদ পরিবারগুলো যেন সম্মানিত হোক।

এই নতুন উদ্যোগকে কেন্দ্র করে সমাজের তরুণ, আলেম, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট এবং সাধারণ মুসলিমদের একাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সরব। তারা একদিকে সংগঠনের অতীত ত্যাগ-তিতিক্ষার স্মরণ করছেন, অন্যদিকে ভবিষ্যতের জন্য দিচ্ছেন কিছু আবেগঘন ও কৌশলগত পরামর্শ।

মাওলানা গাজী ইয়াকুব হেফাজতের সমাবেশে স্টেজে বক্তাদের প্রতি উদ্দেশ করে বলেন, সভা সমাবেশে যে কেউ মাইক পেলেই হুংকার দিয়েন না। এমন করব!তেমন করব! বলার আগে পায়ের তলায় মাটি কতটুকু আছে সেটাও ভাইবেন। আমি আর আপনি আহমদ ইবনে হাম্বল না। এগুলো সবাইকে মানায় না।

শাপলা অভিযানের শহীদদের সন্তানদের দিয়ে উদ্বোধনের প্রস্তাব এসেছে লেখক মাওলানা রুহুল আমিন সাদীর কাছ থেকে। তিনি বলেন, “সেই শিশু এখন কিশোর, তার বাবার শাহাদাত বৃথা যায়নি—এ অনুভূতি হোক উদ্বোধনের মাধ্যমে জাগ্রত।””

তরুণ আলেম লেখক ইব্রাহীম জামিল বলেন, হেফাজতের উচিত নারী ইস্যুতে শক্ত অবস্থান নেওয়া এবং ৫ মে ঘটনার দায়ে সরকার পতনের দাবি তোলা না, বরং আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধের দাবি তোলা।

মুহাম্মদ মোরশেদ নামের এক তরুণ বলেন, “শাপলা চত্বরে গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করুক হেফাজত।”

তরুণ আলেম ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট হাসিব আর রহমান বলেন, হেফাজতের বিরুদ্ধে থাকা সব মামলার নির্বাহী আদেশে খারিজ এবং শাপলার গণহত্যার বিচার আদায়ে সর্বশক্তি প্রয়োগ করতে হবে।

শাহীন হাসনাত বলেন, “শহীদ হয়েছে দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভিও।” স্মৃতিচারণে তিনি শহীদ গণমাধ্যমের কথাও স্মরণ করেন।

মুহা. মোজাম্মেল বলেন, হেফাজত যৌবনদীপ্ত হতে চাইলে বাস্তব পরিকল্পনা ও তালিকা প্রকাশ করা উচিত।

শাহ্ তোয়াইব আল-হানাফী বলেন, “সিন্ডিকেট মুক্ত হেফাজত চাই।”

আলেম সাংবাদিক আবু সাঈদ সতর্ক করেন, “সরকার হঠানোর হুঁশিয়ারি যেন না আসে, কারণ এর ভুক্তভোগী পুরো মুসলিম কমিউনিটি।”

হাফেজ আলী আকবার বলেন, “শাপলার প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরা হোক এবং বিশ্বাসঘাতকদের জাতির সামনে চিহ্নিত করা হোক।”

আব্দুল মুমিন নামের এক তরুণ নিরাপত্তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, “পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে।”

তরুণ মঈন উদ্দিন প্রশ্ন তোলেন, “এতদিনেও কি শহীদদের তালিকা হয়নি? তাদের কোনো সহযোগিতা হয়নি কেন?”

সাইফুল ইসলাম বলেন, “শাপলার গণহত্যার বিস্তারিত তথ্য জানানো হোক। আমি সেই রাতের সাক্ষী, এখনো আতকে উঠি।”

উল্লেখ্য, হেফাজতে ইসলামের আগামী মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষ ও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এক গভীর প্রত্যাশা ও আবেগ কাজ করছে। তাঁরা শুধু দাবির পক্ষে নয়, বরং হেফাজতের অতীত সংগ্রাম, শহীদদের স্মরণ এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন। সমাবেশে এসব দাবির প্রতিফলন দেখা গেলে হয়তো হেফাজত আবারও তাদের আগের শক্ত অবস্থানে ফিরতে পারবে—এমনটাই প্রত্যাশা তরুণ সমাজের।

banner

এ জাতীয় আরো সংবাদ

প্রকাশক: আবু সায়েম খালেদ
পরিচালক: এইচ. এম. মুহিউদ্দিন খান
আসকান টাওয়ার, ৬ষ্ঠ তলা, ১৭৪ ধোলাইপাড়
যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪
ইমেইল: info@36news24.com
ফোন: 01401 400222