হাসান আল মাহমুদ >>
বাংলাদেশের নতুন মুদ্রায় হিন্দু মন্দিরের ছবি ছাপানোকে ঘিরে ধর্মীয় পরিমণ্ডলে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা ও প্রতিক্রিয়া। ইসলামি চিন্তাবিদ ও আলেমগণ বলছেন—মুসলমানপ্রধান একটি রাষ্ট্রের জাতীয় প্রতীকে এমন উপস্থাপন সাংস্কৃতিক ভারসাম্যের পরিপন্থী হতে পারে। এ বিষয়ে ৩৬ নিউজকে বিস্তারিত মতামত দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় মুফতী বোর্ড ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও দেশের বিশিষ্ট আলেম শাইাখুল হাদিস আল্লামা মুফতী খোরশেদ আলম কাসেমী।
ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে আপত্তির মূল ভিত্তি
মুফতী খোরশেদ আলম মনে করেন, ইসলামে মূর্তি ও মূর্তিপূজাকে স্পষ্টভাবে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। সেই আলোকে মুসলমানপ্রধান একটি দেশের মুদ্রায় কোনো মন্দির বা উপাসনালয়ের ছবি থাকা ইসলামি সংস্কৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
তিনি বলেন, “এটা কেবল স্থাপনার ছবি নয়, বরং একটি ধর্মীয় উপাসনালয়—যেখানে মূর্তি প্রতিষ্ঠা ও উপাসনা হয়। ফলে এটি নিরপেক্ষ নয়; বরং একটি স্পষ্ট ধর্মীয় বার্তা বহন করে।”
‘সহনশীলতা’ নাকি ‘সাংস্কৃতিক চাপিয়ে দেওয়া’?
অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, এটি তো কেবল একটি স্থাপনার প্রতিকৃতি, এতে আপত্তির কী আছে? এ বিষয়ে ৩৬ নিউজকে মুফতী বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, ‘যদি ধর্মনিরপেক্ষতার নামে একটি ধর্মীয় প্রতীককে রাষ্ট্রীয় প্রতীকে স্থান দেওয়া হয়, তা অন্যদের প্রতি সহনশীলতা নয়; বরং একধরনের সাংস্কৃতিক আগ্রাসন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইসলাম সব ধর্মের প্রতি সহনশীলতা শেখায়। তবে সহনশীলতার নামে একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রে ভিন্ন ধর্মের প্রতীকের আধিপত্য চাপিয়ে দেওয়া গ্রহণযোগ্য নয়।’
শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও সম্মিলিত উদ্যোগ
মুফতী খোরশেদ জানান, জাতীয় মুফতী বোর্ড ফাউন্ডেশন এই বিষয়ে একটি লিখিত বিবৃতি দিয়েছে। একই সঙ্গে দেশবরেণ্য ওলামায়ে কেরামের সঙ্গে পরামর্শ করে সরকারের কাছে একটি সম্মিলিত দাবিপত্র পেশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সরকারকে এই বিষয়ে পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাচ্ছি’— বলেন তিনি।
বার্তা ও আবেদন
সাক্ষাৎকারের শেষে মুফতী খোরশেদ বলেন, ‘আমরা চাই রাষ্ট্র ইসলামি চেতনা ও সংস্কৃতিকে মর্যাদা দিক। কোনো উত্তেজনা নয়, যুক্তি ও সম্মানের মাধ্যমে আমরা এই বার্তা তুলে ধরতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় প্রতীকে কী থাকবে আর কী থাকবে না—এটি শুধু নান্দনিকতার বিষয় নয়, বরং সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতিফলন। বাংলাদেশের মতো একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রে ধর্মীয় প্রতীক নিয়ে এমন সংবেদনশীলতায় রাষ্ট্র ও ধর্মীয় নেতৃত্ব—উভয় পক্ষেরই সংবেদনশীল ও ভারসাম্যপূর্ণ ভূমিকা প্রত্যাশা করেন দেশবাসী।’
হাআমা/