হাসান আল মাহমুদ >>
২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদনের পর থেকেই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহল। ইসলামপন্থী দলগুলোও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রশাসনিক ধারাবাহিকতায় অনুমোদিত এই বাজেটকে একপক্ষ ‘দুর্বল, বৈষম্যমূলক ও জনবিচ্ছিন্ন’ আখ্যা দিলেও, অন্যপক্ষ এটিকে বাস্তবতাসম্মত ‘রক্ষণশীল বাজেট’ বলে মূল্যায়ন করেছে—যদিও আশানুরূপ সংস্কারের অভাব নিয়ে প্রায় সব দলেরই উদ্বেগ রয়েছে।
বৈষম্য কমানোর কার্যকর উদ্যোগ নেই: বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা ইউসুফ আশরাফ ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, এই বাজেট দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট ও সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের বাস্তব দাবি পূরণে ব্যর্থ। তাঁরা দাবি করেন, বাজেটে কোনো মৌলিক সংস্কার, দুর্নীতি প্রতিরোধ কিংবা বৈষম্য নিরসনের সুস্পষ্ট নীতিমালা নেই।
বিবৃতিতে বলা হয়, “প্রস্তাবিত ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেটে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটির ঘাটতি এবং ১ লাখ ১৫ হাজার কোটির সুদ পরিশোধ—এ দুটি তথ্যই প্রমাণ করে যে জনগণের ওপর করের বোঝা ও ঋণনির্ভরতা বাড়বে।”
তাঁরা আরও অভিযোগ করেন, “উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ কমিয়ে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কাটছাঁট করা দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি অন্যায়। জনআস্থা পুনঃস্থাপনের জন্য দুর্নীতিবিরোধী কোনো সাহসী উদ্যোগ বাজেটে অনুপস্থিত।”
তবে তাঁরা বাজেটে আন্দোলনে নিহত ও আহতদের জন্য ৪০০ কোটি টাকার বরাদ্দকে “মানবিক অগ্রগতি” হিসেবে স্বাগত জানালেও, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে নিহতদের প্রসঙ্গে বৈষম্য তুলে ধরেন।
খেলাফত মজলিসের দাবি, “বাজেটের নৈতিক ভিত্তি হতে হবে জনগণের স্বার্থরক্ষা ও সম্পদের সুবিচার। দুর্নীতির পথ বন্ধ করে স্বচ্ছ রাজস্বনীতি ও উৎপাদনমুখী খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।”
জাতির আশা পূরণ করবে না: জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র সহসভাপতি মাওলানা আব্দুর রউফ ইউসুফী বলেন, “বাংলাদেশ বন্যাকবলিত দেশ। বর্তমানেও দেশের নানা জায়গায় বন্যা হচ্ছে। অথচ বাজেটে বন্যাকবলিত এলাকার জন্য কোনো আলাদা বরাদ্দ নেই। এটি একটি বড় দুর্বলতা।”
তিনি আরও বলেন, “এই বাজেট পুরোপুরি গতানুগতিক। নতুন কিছু নেই, জাতির আশা পূরণ করবে না।”
গতানুগতিক বাজেট, চমক নেই: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, “এই বাজেটের ধরন ও চরিত্র দেখে একে গতানুগতিক রক্ষণশীল বাজেট বলেই মনে হচ্ছে। বাজেট প্রস্তাবনা ছিল বাস্তবতানির্ভর, উচ্চাভিলাষী ছিল না—এজন্য সরকারকে সাধুবাদ জানাই।”
তবে তিনি বাজেটের বেশ কিছু দিক নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেন। “কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া। শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়ন খাতের তুলনায় জ্বালানি ও গণযোগাযোগ খাতে অগ্রাধিকার দেওয়াও পুরনো ধারার প্রতিচ্ছবি।”
তিনি মনে করেন, “গণ-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকারের কাছে আরো সাহসী ও বৈপ্লবিক বাজেট প্রত্যাশিত ছিল, যা এই বাজেট দিতে পারেনি।”
হাআমা/