কিছু ফুল মমি হয়েই সৌন্দর্য ছড়াক
পাওয়া-না পাওয়ার পরিসংখ্যানটা এমএস এক্সেলের ফাইলেই শুয়ে থাকুক।
সম্পর্কের প্রফিট, দূরত্বের ড্যামেজ, কে কাকে কতটুকু দিলাম, নাকি শুধু নিয়েই গেলাম— শুল্ক ফাঁকির ধান্ধায় এসব কর্পোরেট হিসেব ঢেকে ফেলি নিপাট ভদ্রতায়।
তুমুল মুখস্ত ৯ এর ঘরের নামতার মতো বেমালুম ভুলে যাই তুমি এবং তোমাকে।
তারপরও ইচ্ছে জাগে, মুছে যেতে যেতে কিছু সেলুলয়েড স্মৃতি ফিল্মিক হয়ে উঠুক।
কিছু বিগত স্পর্শ ইনসোমনিয়ার কারণ হোক।
কিছু ফুল মমি হয়েই সৌন্দর্য ছড়াক— যদিও তাতে আর সুগন্ধ না থাকে…
সেদিন সকাল হবে
একদিন সকাল হবে—
যে সকালে থাকবে না সূর্যের ক্রমবর্ধমান ক্রোধ
কিংবা সদ্য গতাসু চাঁদের অমলিন অভিমান।
সেদিন যাবতীয় আঁধার আড়ালে প্রস্থান করবে
যেন অবরোধবাসিনীর অবয়ব।
মিথ্যারা সত্যের আশ্রয়ে লুফে নিবে নবজীবনের স্বাদ—
চকিতে চোখ মেলে দেখবে অভূতপুর্ব সোনালি সকাল।
কর্পোরেট পতিতারা আব্রুর হেফাজতে লুকিয়ে যাবে
কালো শামিয়ানার অন্তরালে।
ভুলভাল পথে বিপথী পুরুষ আপন নীড়ে ফিরে আসবে
এক সিন্ধু লজ্জায়—
তওবার তরবারিতে টুকরো টুকরো হয়ে মিশে যাবে আজানুলম্বা আলখেল্লায়।
একদিন সকাল হবে—
রৌদ্রোস্নাত সেই প্রভাতে জালিমের চকচকে থালায় পাশাপাশি খোরাকের খোয়াব দেখবে মজলুম আবদুল হক।
পুঁজিবাদ পিটারেরা ফিরিয়ে দিবে নিগৃহীতদের জিঘাংসিত জমিন।
নায্য পানির হিস্যা নিয়ে দুয়ারে দাঁড়াবে প্রতিবেশি ব্যয়কুণ্ঠ চক্রবর্তী।
ঔরস্য সন্তানের প্রত্যাবর্তন চেয়ে বিশ্ব দরবারে আরজি জানাবে নাফ পাড়ের নির্মম বড়ুয়া।
সেদিন অস্ত্রের নলে ফুটে উঠবে হাসনাহেনা ফুল—
ফেলানিরা ফেলনা হয়ে ঝুলবে না আর
কাঁটাতারের বর্ধিত বেড়ায়।
রাস্তার কুকুরের ঘেউ ঘেউ থেমে যাবে সেদিন—
দংশিত হবে না স্কুলগামী কিশোরীর মসৃণ পদচারণ।
সাপ, বিচ্ছু, বিছুটি, মনুষ্য জিব— নির্বিষ হয়ে যাবে সব।
৯ নম্বর বাসের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় পিষ্ঠ হবে না
বহুদিন বাদে ঘরে ফিরতে চাওয়া দূরবর্তী মায়ের আদর।
ধর্ষিতার ধিক্কারে কেঁপে উঠবে না আর অবিরাম স্ক্রলে
ক্লান্ত হয়ে পড়া মাননীয় সোশ্যাল সরকার।
সেদিন সকাল হবে—
যাবতীয় অনাচারের অনুপস্থিতিতে হেসে উঠবে পৃথিবী,
অপূর্ব অপেরায় বেজে উঠবে মুক্তির পয়গাম।
ম্যাংগোপিপল
পাতা খসে পড়ে গেলেও বৃক্ষ থাকে বেঁচে—
পা-হারানো পতঙ্গটাও আমৃত্যু যায় নেচে।
মরুর বুকে মরীচিকার হাসি
আমিও খুব উদার ছিলাম—
শিশিরের মতো সরল, আকাশের মতো নীল।
কোনো এক সন্ধ্যায়, মেঘভরা গগনে, আমিও ছিলাম
উষ্ণ পৃথিবীর প্রতি অনেক বেশি সহানুভূতিশীল…
তারপর,
কে কিংবা কাদের আঘাতে আমি কেমন কঠিন হলাম—
জল জমে হয়ে গেলাম অখণ্ড বরফ।
ভেতর থেকে শুকিয়ে গেল সকল মায়ার নদ।
ঝরে পড়ল সুষম পুষ্পরাশি।
হাসতে হাসতে হয়ে উঠলাম জ্বলজ্যান্ত পাথর—
মরুর বুকে মরীচিকার হাসি।
বলতে পারো?
কাদের ছোঁয়ায় তড়িৎ শিখে ফেললাম পৃথিবীর ভাষা৷
গিলে ফেললাম সভ্যতার জ্যোতি।
হয়ে গেলাম মানুষ থেকে নর।
সেঁটে দিলাম নিষেধাজ্ঞার নথি…
কেউ কোলাহলেও একা
আজকাল আমার কেমন যেন লাগে—
মনের চিলেকোঠায় একটা চাপা কষ্ট, বোবা আর্তনাদ!
যখন কেউ উপযাচক হয়ে জানতে চায়, ‘কী হয়েছে?’
আমি বলি, ‘কিছু অনুভূতি অব্যক্ত।’
বুকের চিনচিন ব্যথাটা ক্রমশ বাড়তে থাকে—
বেধড়ক ওঠানামায় হৃপিণ্ড যখম হয়।
আজকাল আমার কেমন যেন লাগে!
কোথায় যেন একটা অপরিচিত শূন্যতা—
‘কিছু নেই কিছু নেই’ অনুভূতি।
আমি বলতে পারি না সেই শূন্যতার নাম—
আমি ব্যাখা করতে পারি না অনুভবের অবয়ব;
ছুঁতে পারি না অনুভূতির গভীরতম স্থান!
আজকাল আমার কেমন যেন লাগে—
বিবস্ত্র আকাশ, বহুগামী নদীর চেয়ে পর্দাঘেরা
চার দেয়াল আপন মনে হয়!
মেঘবিকেলে বেনামি কিছু কষ্ট পুষে
সন্ধ্যা নামার একটু আগে জানালার ফাঁক গলে বাইরে তাকাই—
চারিদিকে কত মানুষ—মানুষের কোলাহল!
হাতটি ধরে বলে না কেউ, ‘আমার সাথে চল্।’
এনএ/