চলছে রোজার মাস, এক মাসের এই পবিত্র সময়ে রোজাদাররা একদিকে যেমন আধ্যাত্মিক উন্নতির পথ অনুসরণ করেন, তেমনি তাদের শরীরেরও বিশেষ যত্ন নিতে হয়। দীর্ঘ সময় পানি পান না করার কারণে অনেকের শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, রোজার সময় পানিশূন্যতা এড়াতে সঠিক খাবার ও পানীয় নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
লবণাক্ত খাবার: শরীরের পানি শুষে নেয়ার কারণ
অনেকে ইফতার কিংবা সেহেরির সময় এমন কিছু খাবার খান, যেগুলোর মধ্যে লবণ পরিমাণ বেশি থাকে। চিপস, আচার, টিনজাত খাবার, প্রক্রিয়াজাত মাংস, ইত্যাদি এসব খাবারে অতিরিক্ত লবণ থাকে, যা শরীরের কোষ থেকে পানি টেনে নেয়। ফলে, খাবারটি খাওয়ার পর শরীর অতিরিক্ত পানি শোষণ করতে বাধ্য হয় এবং রোজার সময় অতিরিক্ত পিপাসা অনুভূত হয়। এই অতিরিক্ত পিপাসা এবং পানিশূন্যতার ফলে রোজা রাখা কঠিন হতে পারে।
ক্যাফিনযুক্ত পানীয়: মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে
ক্যাফিন একটি প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক, যার মানে হলো এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত প্রস্রাবের মাধ্যমে পানি বের করে দেয়। সেহেরি বা ইফতারী খাবারের মধ্যে কফি, চা বা সোডা পান করলে শরীরে দ্রুত পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। এসব পানীয় শরীর থেকে তরল বের করে দেয়, ফলে দিনের বেলা পিপাসা বেড়ে যায় এবং শরীর আর্দ্রতা হারাতে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রোজায় ক্যাফিনযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলা উচিত, বিশেষত সেহেরির সময়।
চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয়: তৃষ্ণার্ততা বাড়ায়
মিষ্টি, চিনিযুক্ত পেস্ট্রি, সোডা, এনার্জি ড্রিংকস, এসব পানীয় ও খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, বিশেষত রোজার সময়। এসব খাবারে অতিরিক্ত চিনির উপস্থিতি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে শরীরে তৃষ্ণার্ত ভাব আরও বৃদ্ধি পায়। ফলস্বরূপ, রোজার মধ্যে অতিরিক্ত তৃষ্ণা এবং পানিশূন্যতা অনুভূত হতে পারে। তাই এসব খাবারও এড়িয়ে চলা উচিত, বিশেষত সেহেরির সময়।
ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার: শরীরের হাইড্রেটেড থাকার ক্ষমতা কমায়
ভাজাপোড়া জাতীয় খাবারে অতিরিক্ত সোডিয়াম এবং অস্বাস্থ্যকর চর্বি থাকে, যা শরীরের পানিশূন্যতার কারণ হতে পারে। চিকেন ফ্রাই, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, কিংবা অন্য কোনো ভাজাপোড়া খাবার শরীরের পানি শোষণের ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে, এবং এগুলোর হজম প্রক্রিয়া হতে পারে কঠিন। এ ধরনের খাবারের কারণে শরীরে অলসতা দেখা দেয় এবং শরীরের হাইড্রেটেড থাকার ক্ষমতা হ্রাস পায়, যা রোজায় বিশেষভাবে ক্ষতিকর।
সুস্থ থাকতে সচেতনতা প্রয়োজন
রোজার সময় শরীরের প্রতি যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত যখন দীর্ঘ সময় পানি পানের সুযোগ থাকে না। সঠিক খাবার বাছাই, পর্যাপ্ত পানি পান এবং কিছু খাবার থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে রোজার সময়ে পানিশূন্যতা রোধ করা সম্ভব। তাই ইফতার ও সেহেরি খাবারে সঠিক পছন্দ করুন, যাতে শরীর হাইড্রেটেড থাকে এবং রোজা রাখার সময় সুস্থ ও প্রাণবন্ত অনুভব করেন।
এনএ/