ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ঘিরে কওমি শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

by hsnalmahmud@gmail.com

হাসান আল মাহমুদ >>

সম্প্রতি ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৩টি ভিন্ন পদে ৩৬৩ জন জনবল নিয়োগের জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। যদিও এ বিজ্ঞপ্তিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন কেউ কেউ, তবে কওমি মাদরাসা পড়ুয়াদের একটি বড় অংশ এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কারণ, বিজ্ঞপ্তির কিছু পদে শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে দাওরায়ে হাদিস পাশ ও অষ্টম শ্রেণি পাশকে এক কাতারে রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা ও সংশ্লিষ্ট মহল।

বিজ্ঞাপন
banner

কওমি পড়ুয়া সিনিয়র সাংবাদিক মুফতি আব্দুল্লাহ তামিম হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “দাওরায়ে হাদিস পাস করে ‘নিরাপত্তা কর্মী’, লেদ মেকার আর ‘ঝাড়ুদার’ পোস্টে আবেদনের সুযোগ! আহ কওমি জাতি, দুঃখ রাখবে কোথায়?”

তবে কওমি আলেম সাংবাদিক কাউসার লাবীব ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বলেন, “ইফাকে ধন্যবাদ—তারা দাওরার সনদকে নূন্যতম সম্মান জানিয়েছে।” তিনি উল্লেখ করেন, ফার্মাসিস্ট, লাইব্রেরি সহকারী, ক্যাটালগার, স্টেনোগ্রাফার, হিসাব সহকারীসহ অধিকাংশ পদে কওমিদের জন্য চাকরির সুযোগ রয়েছে।

অন্যদিকে তরুণদের হতাশা আর অধিকারবোধের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমার মতো অসংখ্য কওমি তরুণ এই সনদ কার্যকর হওয়ার অপেক্ষায় আছে তীর্থের কাকের মতো। হাইআতুল উলয়ার মুরব্বিরা সামান্যতম সচেতনতার পরিচয় দিতে পারে নি বলেই আজ এই অবস্থা।”

কওমি আলেম ও সাংবাদিক আবু সাঈদ হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “সমালোচনা করে কী লাভ? সবাই যখন দাবি আদায় করে নিলো, আমরা তখন চেয়ে চেয়েই দেখলাম। নিজেদের দাবি নিয়ে মাঠে নামলাম না। এখন পরিণতি তো এমনই হবে।”

কওমির মেধাবী মুখ হাসিব আর রহমান বলেন, “দাওরায়ে হাদিস পাশ করা একজন অষ্টম শ্রেণির সমতুল্য পরিচ্ছন্নতা কর্মীর চাকরির জন্য আবেদন করবে কেন? এটা কি দাওরায়ে হাদিসের সনদের অবমাননা নয়?” তিনি প্রশ্ন তোলেন, দাওরার সনদের জেনারেল মান আসলে কী এবং সেটা কি কোথাও নির্ধারিত হয়েছে?

কওমি শিক্ষাবিদ ও লেখক মাহমুদুল হক জালীস বলেন, “ইসলামিক ফাউন্ডেশন দাওরায়ে হাদিসকে অষ্টম শ্রেণির সমতুল্য হিসেবে বিবেচনা করেছে—এটা কেবল অপমানজনক নয়, বরং এই সনদের স্বীকৃতি আদায়ে ব্যর্থতার প্রতিফলন।” তিনি বলেন, “এখন যদি আমরা জোরালো পদক্ষেপ না নিই, ভবিষ্যতে এই স্বীকৃতি আদায়ের কোনো নিশ্চয়তা নেই।”

কওমি সাংবাদিক জামিল আহমদ বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “দাওরার স্বীকৃতি এসেছে প্রায় আট বছর আগে, কিন্তু আজও তার নিচের স্তরগুলোর সুনির্দিষ্ট বিন্যাস হয়নি। কেন?”

সাংবাদিক নুরুদ্দীন তাসলিম বলেন, “বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যাচ্ছে দাওরার সার্টিফিকেট ও অষ্টম শ্রেণির সার্টিফিকেটকে একই দৃষ্টিতে দেখা হয়েছে। পরিচ্ছন্নতা কর্মীর মতো পদের জন্য দাওরা পড়ুয়াদের আবেদন করতে বলা হয়েছে। এটি অবশ্যই দাওরার সনদের অবমূল্যায়ন।” তবে তিনি এটাও বলেন, “সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন অন্তত কিছুটা মূল্যায়ন করেছে—সেটাও অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। কওমি শিক্ষার্থীরা যেন শোকরিয়া করতেও ভুলে যাচ্ছে।”

অন্যদিকে কওমি লেখক ও সম্পাদক হাম্মাদ রাগিব বলেন, “দাওরা পাশ করে কেউ খাদেমের চাকরি করছেই। সরকার তার জায়গা থেকে স্বীকৃতির কাঠামো দিয়েছে, কিন্তু সেই স্বীকৃতির কার্যকারিতা আনতে কওমি বোর্ডগুলোর মুরব্বিদের জোর ভূমিকা প্রয়োজন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্বীকৃতি না থাকায় চাকরির ক্ষেত্রে দাওরা সনদই একমাত্র ভরসা হয়ে উঠছে।”

এই প্রেক্ষাপটে কওমি শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিজ্ঞপ্তি কেবল একটি চাকরি বিজ্ঞপ্তি নয়, বরং এটি একটি বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে—দাওরায়ে হাদিসের স্বীকৃতি ও তার বাস্তব মূল্য কোথায় দাঁড়িয়ে আছে?

হাআমা/

banner

এ জাতীয় আরো সংবাদ

প্রকাশক: আবু সায়েম খালেদ
পরিচালক: এইচ. এম. মুহিউদ্দিন খান
আসকান টাওয়ার, ৬ষ্ঠ তলা, ১৭৪ ধোলাইপাড়
যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪
ইমেইল: info@36news24.com
ফোন: 01401 400222