নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন, যে বিষয়গুলি মনে রাখা জরুরি

by Nur Alam Khan

মুফতি লুৎফুর রহমান ফরায়েজি >>

কেনো জানি মনে হচ্ছে এ লড়াই দীর্ঘ হবে। হতে পারে রক্তক্ষয়ীও। মাঠে ময়দানে ধর্মপ্রাণ মানুষ যতোই লড়াই করুক, প্রাণ বিসর্জন দিক, দেশের নীতি নির্ধারণী ক্ষমতা সেই মুষ্টিমেয় কিছু ধর্মবিদ্বেষীর হাতেই রয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন
banner

যাদের কেউ দিল্লির প্রেসক্রিপশনে চলে। কেউ আবার পশ্চিমা এজেন্ডা বাস্তবায়নে মত্ত। কেউ আমাদের রাশিয়াপন্থী বানাতে চায়। কেউ আবার আমেরিকাপন্থী হিসেবে গড়ে তুলতে মরিয়া।

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন সরাসরি প্রধান উপদেষ্টার সন্তুষ্টির ভিত্তিতেই হয়েছে বলে ধীরে ধীরে পরিষ্কার হচ্ছে।

তিনি যেভাবে এ বিষয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। বই আকারে বিলি করার ঘোষণা দিয়েছেন। সেইসঙ্গে এতো আন্দোলন ও প্রতিবাদের পরও নির্বিকার ভূমিকা পালন করছেন তা এটাকেই প্রমাণ করে।

মিডিয়া ও আইনপ্রণেতা সবই বাম ঘরানার দখলে বলা যায়। এমতাবস্থায় ধর্মপ্রাণ মানুষের আন্দোলন বিতর্কিত করতে, ধর্ম ও ধর্মপ্রাণ নাগরিকদের নারীবিদ্বেষী প্রমাণে অনেক ধরনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সামনেও হতে পারে। যেমন: গতকাল শেখ হাসিনার প্রতীকী ফাঁসির পুত্তলিকা পোড়ানোর ঘটনাকে নারীবিদ্বেষী রূপ দেয়ার কুচেষ্টা করেছিল এক হলুদ সাংবাদিক।

যদিও সে হলুদ সাংবাদিককে রাতেই চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। কিন্তু ধর্মবিদ্বেষী এসব সাংবাদিকের অপতৎপরতা বন্ধ হবে না।

গতকাল দেখা গেছে, কিছু কিছু সাংবাদিক হেফাজত আহুত সমাবেশে আগত অনেককে নারী কমিশন বিষয়ে প্রশ্ন করে নাস্তানাবুদ করার চেষ্টা করছে।

এ বিষয়ে পড়াশোনা না করে কেউ কেউ উদ্ভট উত্তর দিয়ে হাস্যরস্যের খোরাক হয়ে যাচ্ছেন। কিছু আলোচক অবাস্তব দাবী করে মূল বিষয়ের গুরুত্ব নষ্ট করে দিচ্ছেন।

এ কারণে কমিশনের প্রতিবেদন সবারই সংগ্রহ করা উচিত এবং এ বিষয়ে মোটা মোটা কিছু কথা মনে রাখা উচিত। কয়েকটি বিষয় তুলে ধরছি:

এক. ইসলাম কি নারীর অধিকার চায় না?

উত্তর: অবশ্যই চায়। ইসলামই নারীকে সর্বাধিক অধিকার দিয়েছে। তবে ইসলাম নারীর সমঅধিকারে বিশ্বাস করে না। বরং ন্যায্য অধিকারে বিশ্বাস করে। কারণ ‘সমঅধিকার’ শব্দ শুনতে সুন্দর হলেও এতে সর্বক্ষেত্রে নারীর যথার্থ মূল্যায়ন ও অধিকার নিশ্চিত হয় না। অনেক ক্ষেত্রেই সমঅধিকার নারীর ন্যায্য অধিকারকে হরণ করে।

যেমন: ইসলাম বিয়েতে পুরুষের ওপর দেনমোহর আবশ্যক করেছে। নারীর ওপর নয়। যদি সমঅধিকারের কথা আসে, তাহলে পুরুষ নারী উভয়ের ওপরই দেনমোহরের কথা চলে আসবে।

বিয়ের পর সংসার চালানোর খরচ ইসলাম পুরোটাই স্বামীর ওপর ন্যাস্ত করেছে। সমঅধিকারের কথা থাকলে সংসারের খরচ নারী পুরুষ উভয়ের ওপরই আবশ্যক হবে।

এমন অনেক বিষয়ে সমঅধিকার নারীর সম্মানহানী ও ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে। এ কারণে ইসলাম সমান অধিকার নয়, বরং ন্যায্য অধিকার, এমনকি ক্ষেত্র বিশেষ নারীর অগ্রাধিকারের প্রবক্তা। সমান অধিকারের নয়।

দুই. নারী সংস্কার কমিশনের কোন বিষয় নিয়ে আপনাদের আপত্তি?

উত্তর: বেশ কিছু বিষয় নিয়েই আমাদের আপত্তি। যেমন:

(ক) স্বামী স্ত্রীর একান্ত বিষয়কে ধর্ষণের অপরাধ হিসেবে চিহ্নিতকরণ। (প্রতিবেদন, পৃষ্ঠা:৩৯)

(খ) বিবাহবিচ্ছেদে স্বামীর পঞ্চাশ ভাগ সম্পদ স্ত্রীকে লিখে দেয়া। (প্রতিবেদন, পৃষ্ঠা: ৪১)

(গ) বেশ্যাবৃত্তিকে শ্রমিকের স্বীকৃতি প্রদান এবং অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত না করা। (প্রতিবেদন, পৃষ্ঠা: ৩৭, ১৫)

এই সুপারিশের কারণে নারী-শিশু পাচার এবং অপহরণ বৃদ্ধি পাবে। সমাজে জারজ সন্তান বৃদ্ধি পাবে, এইডসের মতো রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটবে। এছাড়া আরো অনেক অপরাধ সংঘটিত হবে।

(ঘ) ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বাতিলকরণ। (প্রতিবেদন, পৃষ্ঠা: ৩৪)

(ঙ) সমকামিতার মতো বিকৃত ও নিকৃষ্ট যৌনাচারকে প্রতিষ্ঠিত করার জঘন্য চেষ্টা। (প্রতিবেদন, পৃষ্ঠা: ৩৩, ৩৪)

(চ) ধর্মকে নারী অধিকারের অন্তরায় সাব্যস্ত করা। (প্রতিবেদন, পৃষ্ঠা: ৯, ৩৩)

(ছ) সংবিধান থেকে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ উঠিয়ে দেয়া এবং রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম তুলে দেয়ার আবেদন। (প্রতিবেদন, পৃষ্ঠা: ৩৫)

(জ) বিবাহ, তালাক, উত্তরাধিকার, অভিভাবকত্ব ও বহুবিবাহসহ একাধিক বিষয়ে কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত বিধান বাতিলের সুপারিশ করা। (প্রতিবেদন, পৃষ্ঠা: ৩৫, ৪৬, ৪৫, ১৫, ৪১, ৪০)

এসব সমাজবিধ্বংসী ও ধর্মবিদ্বেষী প্রস্তাবের কারণে আমরা নারী সংস্কার কমিশনের বিরোধিতা করছি।

এআইএল/

banner

এ জাতীয় আরো সংবাদ

প্রকাশক: আবু সায়েম খালেদ
পরিচালক: এইচ. এম. মুহিউদ্দিন খান
আসকান টাওয়ার, ৬ষ্ঠ তলা, ১৭৪ ধোলাইপাড়
যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪
ইমেইল: info@36news24.com
ফোন: 01401 400222