গণপিটুনিতে জামাই-শ্বশুর নিহতের ঘটনায় ৮ পুলিশ সদস্য বরখাস্ত

by naymurbd1999@gmail.com

রংপুরের তারাগঞ্জে রূপলাল দাস ও প্রদীপ দাসকে গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে দুই এসআইসহ আট পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাছাড়া এসআই আবু জোবায়েরকে তদন্তের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (১৩ আগস্ট) রাত পৌনে ১০টার সময় রংপুরের পুলিশ সুপার আবু সাইম বিষয়টি  নিশ্চিত করেছেন। তিনি জাানন, এ ঘটনায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ভূমিকা কি ছিল তা জানতে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন
banner

বরখাস্তপ্রাপ্তরা হলেন- তারাগঞ্জ থানার এসআই আবু জোবায়ের, এসআই শফিকুল ইসলাম, কনস্টেবল ফারিকুদ আখতার জামান, বিরাজ কুমার রায়, হাসান আলী, ফিরোজ কবীর, মোক্তার হোসেন ও বাবুল চন্দ্র রায়।

পুলিশ জানায়, ওই দুই এসআই ও ছয় কনস্টেবল মোবাইল টিমের সদস্য ছিলেন। এই ঘটনা তদন্তে রংপুর তারাগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের  ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবু জোবায়েরকে তদন্তের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে তারাগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) রফিকুল ইসলামকে নতুন তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এই হত্যাকাণ্ডের পর  ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ৫ মিনিট ২১ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, রূপলাল দাস ও প্রদীপ দাসকে আটকে রেখে বুড়িরহাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে একটি ভ্যানের ওপর বসিয়ে রাখা হয়েছে। চারদিকে কয়েকশ মানুষ, পুলিশের চার সদস্য ভ্যানটি ঘিরে রেখেছে। এসময় বাঁশিতে ফুঁ দিচ্ছিলেন পুলিশ সদস্যরা এবং হাত তুলে জনতাকে নিবৃত করার চেষ্টা করছেন। এক পর্যায়ে রূপ লালকে ভ্যানের ওপর দাঁড়িয়ে সবার কাছে জীবন ভিক্ষা করার জন্য হাত জোড় করতে দেখা যায়।

পুলিশ জনতাকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও বিক্ষুব্ধরা আরও উত্তেজিত হয়ে চিৎকার শুরু করে। পরে পুলিশ গণপিটুনিতে গুরুতর আহতদের ফেলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

এ বিষয়ে রূপলালের এক আত্মীয় (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) বলেন, পুলিশ দেখলো তারা মাত্র চারজন, ঘটনা সামাল দিতে পারছে না। বিষয়টি থানার ওসিকে মোবাইল করে জানালে আরও ফোর্স নিয়ে এলে হয়তোবা রূপলাল ও প্রবীর দাসকে জীবিত উদ্ধার করতে পারতো। কারণ পুলিশ আসা, অবস্থান করা ও চলে যাওয়ার এক ঘণ্টা পরও তারা দুজনই জীবিত ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী যুবক নাম প্রকাশ না করে বলেন, রূপলাল দাস ও তার ভাগ্নি জামাই প্রদীপ দাস ভ্যানে করে যখন আসছিলেন, তখন আল আমিন নামে এক ব্যক্তি প্রথমে ভ্যানটি আটকিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছিল। এ সময় বস্তার মধ্যে কি আছে তা জানতে চায়। এ সময় মেহেদী হাসান নামে এক যুবক সেখানে এসে বস্তার ভেতরে ছোট ছোট বোতলে তাড়ি (দেশি মদ) দেখতে পেয়ে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় হইচই শুরু হলে মেহেদী হাসান নামে এক যুবক বলতে থাকে, ‘এই সব খাইয়ে ওরা ভ্যান ছিনতাই করার চেষ্টা করছিল।’

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ চলে যাওয়ার পর রূপলাল মাথা তুলতেই কালো গেঞ্জি পরা এক যুবক তাকে ঘুষি মারেন। এতে আবার লুটিয়ে পড়েন রূপলাল। এরপর ভ্যানের ওপর শোয়া অবস্থায় থাকা দুজনকে কয়েকজন ব্যক্তি যে যেভাবে পারেন কিল, ঘুষি, লাথি, লাঠি ও রড দিয়ে মারতে থাকে। একপর্যায়ে ভ্যানের ওপর থেকে মাটিতে পড়ে যান প্রদীপ দাস। এ দৃশ্য মোবাইল ফোনের আলো জ্বালিয়ে অনেকেই ভিডিও করছিলেন। প্রদীপ দাস ভ্যান থেকে মাটিতে পড়ে গেলে তাকে উপুর্যপরি লাথি মারতে দেখা যায়।

একপর্যায়ে কয়েকজন রূপলাল ও প্রদীপকে রশি, জুতা, গাছের ডাল, ভ্যানের প্যাডেল দিয়ে মারধর করতে থাকে। এ সময় দুজনই জ্ঞান হারিয়ে যায়। এ সময় মৃত্যু নিশ্চিত করতে হলুদ, কালো, লাল গেঞ্জি পরা ৪/৫ জন রূপলালের পিঠে লাথি মারতে থাকে। হলুদ গেঞ্জি পরা দুই তরুণ দুই পা দিয়ে পিঠ বরাবর একাধিকবার লাথি দিতে থাকে- তারা উল্লাস করতে থাকে। এ সময় হলুদ গেঞ্জি পরা এক তরুণ গাছের ডাল দিয়ে আবারও দুজনকে মারতে থাকে। ছাই রঙয়ের গেঞ্জি পরা এক যুবককে রূপলালের গলায় বারবার পা দিয়ে চেপে ধরতে দেখা যায়। তখন আশপাশের কয়েকজন বলছিল, ‘পুলিশ পালাইছে’।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক  একজন স্কুল শিক্ষক নাম প্রকাশ না করে বলেন, মব সৃষ্টিকারীরা যেমন দোষী তেমনি পুলিশও তাদের দায় এড়াতে পারে না। ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে তাদের রক্ষা না করে  ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে গেছে।

তারাগঞ্জ থানার ওসি এম এ ফারুক বলেন, ঘটনাস্থলে হাজার হাজার মানুষ ছিলেন। এর বিপরীতে সেখানে চার জন পুলিশ সদস্য ছিলেন। তারা রূপলাল ও প্রদীপকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু পেছন থেকে যখন পুলিশকে ধাক্কাধাক্কি, ঘুষাঘুষি শুরু করা তারা আত্মরক্ষার্থে সরে এসেছেন। আমরা ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে প্রকৃত দোষীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।

প্রসঙ্গত, গত ৯ আগস্ট শনিবার রাতে রূপলাল ও তার ভাগ্নি জামাই প্রদীপকে চোর গণপিটুনিতে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রূপ লালের স্ত্রী ভারতী রানী বাদী হয়ে ৫০০/৭০০ অজ্ঞাতের বিরুদ্ধে তারাগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেছেন। পুলিশ এ পর্যন্ত চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

এনআর/

banner

এ জাতীয় আরো সংবাদ

প্রকাশক: আবু সায়েম খালেদ
পরিচালক: এইচ. এম. মুহিউদ্দিন খান
আসকান টাওয়ার, ৬ষ্ঠ তলা, ১৭৪ ধোলাইপাড়
যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪
ইমেইল: info@36news24.com
ফোন: 01401 400222