জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেছেন, দাওয়াতের কারণেই এ উম্মাহ সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি। দাওয়াত আমাদের হাতিয়ার। তবে দাওয়াতি কাজে রাসূল সা.-এর পদ্ধতি ও কৌশল সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। বিশেষ করে কুরআন, হাদিস, সীরাতুন্নবী সা., সাহাবী, তাবেয়ী ও পূর্ববর্তী আলেমদের দাওয়াতী কৌশল সম্পর্কে জানতে হবে। বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক ও ধর্মীয় অবস্থাকে সামনে রেখে ইসলামের সুমহান আদর্শের দাওয়াত দিতে হবে। মানুষের সাথে কঠোরতার পরিবর্তে ইসলামের সহজ নীতি গ্রহণ করতে হবে। ইসলামের ছোট ছোট বিষয়ে পারস্পরিক হিংসা ও বিদ্বেষ থেকে বিরত থেকে আমাদেরকে দাওয়াতের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।’
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুর ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সামাদ হলে পয়ামে ইনসানিয়াত বাংলাদেশের ‘জাতীয় দাওয়াহ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সংগঠনটির উপদেষ্টা আল্লামা আব্দুর রাজ্জাক নদভীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে স্বাগত ভাষণ পেশ করেন পয়ামে ইনসানিয়াত বাংলাদেশের আমির ডক্টর শহীদুল ইসলাম ফারুকী।
প্রধান অতিথি ছিলেন রাজনীতিবিদ মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, লেখক ও ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা আব্দুর রহীম ইসলামাবাদী, রাজনীতিবিদ ও মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা তাফাজ্জুল হক আজিজ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ার অধ্যাপক ড. আব্দুর রহমান আনওয়ারী, দৈনিক নয়াদিগন্তের সিনিয়র সাব-এডিটর মাওলানা লিয়াকত আলী ও সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. এর খলিফা মাওলানা জুলফিকার আলী নদভী প্রমুখ।
মুফতি আফজাল হুসাইন, আরজে মামুন চৌধুরী ও আব্দুল গাফফারের সঞ্চালনায় আলোচনা করেন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মাওলানা রুহুল আমীন সাদী, ধানমন্ডি তাকওয়া মসজিদের খতীব মুফতি সাইফুল ইসলাম, মুফাসসিরে কুরআন ও আলোচক মুফতি আব্দুল্লাহ ইয়াহইয়া, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সহযোগী অধ্যাপক ড. একেএম মুহিব্বুল্লাহ, লেখক ও গবেষক মুফতি জহির ইবনে মুসলিম, দাঈ ও লেখক মুফতি মুজিবুর রহমান কাসেমী, বিশিষ্ট দাঈ মুফতি জুবায়ের আহমদ, দাঈ মুফতি কামরুল হাসান নেছারী, দাঈ মাওলানা সোহরাব হুসাইন, আলোচক ও দাঈ মাওলানা ইয়াছিন আহমাদ জিহাদি, লেখক মুফতি আহমাদুল্লাহ আব্বাস প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে পয়ামে ইনসানিয়াত বাংলাদেশের উপদেষ্টা আল্লামা আব্দুর রাজ্জাক নদভী বলেন, মুফাক্কিরে ইসলাম সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. ছিলেন বিংশ অন্যতম শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ইসলামি ব্যক্তিত্ব ও আধ্যাত্মিক রাহবর। বিশ্বে প্রতিনিয়ত মানবতা ভূলুন্ঠিত ও সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে হানাহানি-মারামারি দেখে তিনি অস্থির হয়ে ওঠেন। তাই তিনি বিশ্বের জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে মানবতা ও মনুষত্বের বিকাশ দান এবং বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান নৈতিক ও চারিত্রিক ধ্বস প্রতিরোধের জন্য অনানুষ্ঠানিকভাবে ১৯৫১ সালে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘পয়ামে ইনসানিয়াত’। ১৯৭৪ সালের তুলনায় বর্তমানে পৃথিবীর অবস্থা আরো ভয়াবহ। এই প্রেক্ষাপটে পয়ামে ইনসানিয়াতের আওয়াজ ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া সময়ের অনিবার্য দাবী।’
স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনের আমির ডক্টর শহীদুল ইসলাম ফারুকী বলেন, ‘অশান্ত পৃথিবীতে মানবতার জাগৃতিই একমাত্র মুক্তির পথ। মানবতা, নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার শূন্যতার কারণেই আজ পৃথিবীর এই বিপর্যয়কর অবস্থা। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্যই পয়ামে ইনসানিয়াতের আন্দোলন। পয়ামে ইনসানিয়াতের বিষয়বস্তু মানবতা ও নৈতিকতা। এর উদ্দেশ্য বিশ্বমানবতার মধ্যে মানবতা, মনুষত্ব ও আধ্যাত্মিকতার বিকাশ দান করা, মানব পরিচয়ে দেশ ও জাতির সেবার চেতনা জাগ্রত করা এবং চরিত্র ও নৈতিকতার উৎকর্ষ সাধন করা। পয়ামে ইনসানিয়াত বাংলাদেশ ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের প্রতিই এ আহবান জানায়।’
লেখক ও চিন্তাবিদ মাওলানা আব্দুর রহীম ইসলামাবাদী বলেন, ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঈমানদারদের জন্য দাওয়াতের এই কাজকে ফরজ করে দিয়েছেন। দাওয়াতের ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালা যে পন্থা বা পদ্ধতি নির্ধারণ করে দিয়েছেন এবং রাসুল সা. তাঁর জীবনে দাওয়াতের ক্ষেত্রে যে সকল পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন আমাদেরও সেভাবে দাওয়াতি কাজ করতে হবে। রাসূল সা. হিকমত বা কৌশলের সাথে দাওয়াত দিয়েছেন। তিনি যে আদর্শের দিকে আহবান করেছিলেন তা তিনি আগে নিজের হৃদয়ে ধারণ করেছিলেন। ফলে সেই আদর্শের প্রতিচ্ছবি তাঁর কাজে ও কর্মে ফুটে উঠেছিলো। পরবর্তীতে সাহাবায়ে কেরাম সেই আলোকে ইসলামের সুমহান আদর্শকে চারিদিকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। আমাদেরকেও ঈমান, আমল ও নৈতিক চরিত্রে বলীয়ান হয়ে দাওয়াতের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।’
রাজনীতিবিদ ও মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা তাফাজ্জুল হক আজিজ বলেন, ইসলামের আদর্শের জন্য কোনো আপোস নয়। আমাদের দাওয়াত হিকমতের সঙ্গে দিতে হবে। দাওয়াতের জ্ঞান অর্জন করতে হবে। রাসূল সা. এর আদর্শ অনুসরণ করে প্রত্যেক মুসলিমকে দাঈ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। মানুষের মধ্যে দাওয়াতি চেতনা জাগিয়ে তুলতে হবে। দাওয়াত থেকে দূরে থাকার কারণেই আজ আমাদের এ দূরাবস্থা। পাশাপাশি যে সমাজে আমরা বসবাস করি সেই সমাজে ১ কোটির বেশি অমুসলিম রয়েছে, তাদেরকেও দাওয়াত দেওয়ার দরকার এবং দাওয়াতের কৌশল নির্ধারণ করার দরকার।’
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ার দাওয়াহ বিভাগের প্রবীণ অধ্যাপক ড. আব্দুর রহমান আনওয়ারী বলেন, ‘আল্লামা নদভী রহ. ছিলেন সত্যিকারের একজন দাঈ। বিগত শতাব্দী কেন, কয়েক শতাব্দী বলুন না, তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠ দাঈ। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, দাওয়াতের সূচনা হয় মূলত ইনসানিয়াত থেকে। তিনি মানুষকে এমনভাবে আকৃষ্ট করতেন, যেভাবে যুগে যুগে নবী-রাসূলগণ আকৃষ্ট করতেন। তিনি নবী-রাসূলদের মতো মানবতাবাদ দিয়েই দাওয়াতের সূচনা করেছেন। আজ আমরা দাওয়াতে সফল হচ্ছি না। কারণ আমরা ইনসানিয়াত থেকে দাওয়াত শুরু করছি না।’
দৈনিক নয়াদিগন্তের সিনিয়র সাব-এডিটর মাওলানা লিয়াকত আলী বলেন, মানুষ যে ধর্মেরই হোক তার প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া এবং মানব পরিচয়ে দেশ ও জাতির সেবায় আত্মনিয়োগ করা রাসূল সা.-এর আদর্শ। রাসূল সা. হিলফুল ফুযুলের মাধ্যমে এ কাজের সূচনা করে গেছেন। বিংশ শতাব্দীর মুফাক্কিরে ইসলাম সাইয়েদ আবুল হাসান আলীন নদভী রহ. এর অনুসরণে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘পয়ামে ইনসানিয়াত’। পয়ামে ইনসানিয়াত হিলফুল ফুযুলের অনুসরণ। বিশ্বের বর্তমান নাযুক পরিস্থিতিতে এ আন্দোলন অত্যন্ত প্রয়োজন।’
সম্মেলনে পয়ামে ইনসানিয়াত বাংলাদেশের মুখপত্র ‘ইনসানিয়াত বার্তা’র মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন মুফতি আ.ফ.ম আকরাম হুসাইন, মুফতি মামুনুর রশীদ চাঁদপুরী, মাওলানা ইয়াকুবুর রহমান, সাংবাদিক হাসান আল মাহমুদ, মাওলানা শফিকুল ইসলাম, মাওলানা এনামুল হক মুসা, ডা. সৈয়দ শামছুল হুদা, মুফতি রিদওয়ানুল হক নদভী, মাওলানা রুহুল আমীন নগরী, ছাত্র রাজনীতিক মুহাম্মাদ কামাল উদ্দীন, মুফতি সাঈফুদ্দীন আল আজাদ, মাওলানা শাহ আবু সাঈদ ছিদ্দীকী, মুফতি সাইফুল ইসলাম আজীজী, মুফতি আব্দুল্লাহ আল নোমান, মোঃ রাহুল বিশ্বাস, সাংবাদিক নুর আলম সিদ্দিকী, জাহিদুল ইসলাম প্রমুখগণ।
এনএ/