ট্রাম্পের শুল্কের প্রতিবাদে ভারতজুড়ে মার্কিন পণ্য বয়কটের আহ্বান

by naymurbd1999@gmail.com

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের প্রতিবাদে ভারতে বয়কটের মুখে পড়েছে ম্যাকডোনাল্ডস ও কোকা-কোলা থেকে শুরু করে অ্যামাজন ও অ্যাপলের মতো যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক বহুজাতিক বিভিন্ন কোম্পানি। দেশটির ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমর্থকরা যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের প্রতিবাদে মার্কিনবিরোধী এই মনোভাবে উসকানি দিচ্ছেন।

 

বিজ্ঞাপন
banner

সোমবার (১১ আগষ্ট ) ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিশ্বের সর্বাধিক জনসংখ্যার দেশ ভারতে দ্রুত বাড়তে থাকা সচ্ছল ভোক্তা শ্রেণিকে লক্ষ্য করে আমেরিকান ব্র্যান্ডের বড় বাজার তৈরি হয়েছে। দেশটিতে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের ব্যবহারকে অনেকে উন্নতির প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করেন।

যেমন, মেটার হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যার দিক থেকে ভারতের অবস্থান শীর্ষে। আর দেশটিতে অন্য যেকোনও ব্র্যান্ডের চেয়ে বেশি রেস্টুরেন্ট রয়েছে ডমিনোজের। প্রায়ই দোকানের তাক দখল করে রাখে পেপসি ও কোকা-কোলা। নতুন অ্যাপল স্টোরের উদ্বোধন কিংবা স্টারবাকস ক্যাফেতে অফার দেওয়া হলে মানুষের দীর্ঘ সারি দেখা যায়।

মার্কিন পণ্য বয়কটের ডাকে কোম্পানিগুলোর বিক্রিতে তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়ার কোনও ইঙ্গিত মেলেনি। তারপরও ভারতের পণ্যের ওপর ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অফলাইনে দেশীয় পণ্য কেনা ও মার্কিন পণ্য বর্জনের ডাক জোরদার হচ্ছে। এর ফলে রপ্তানিকারকদের মাঝে উদ্বেগ এবং দিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তবে এই বিষয়ে মন্তব্য জানতে ম্যাকডোনাল্ডস, কোকা-কোলা, অ্যামাজন ও অ্যাপলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া দেয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ওয়াও স্কিন সায়েন্সের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মনীশ চৌধুরী লিংকডইনে এক ভিডিও বার্তায় দেশটির কৃষক ও স্টার্টআপগুলোকে সমর্থনের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘মেড ইন ইন্ডিয়াকে’ বিশ্বজুড়ে আবেগের পণ্যে পরিণত করতে হবে। দক্ষিণ কোরিয়ার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, এই দেশটির খাদ্য ও সৌন্দর্য বর্ধনের সব পণ্য সারা বিশ্বে জনপ্রিয়।

মনীশ বলেন, আমরা হাজার হাজার মাইল দূরের পণ্যের জন্য লাইন ধরেছি। বিদেশি ব্র্যান্ডের পেছনে গর্ব করে অর্থ খরচ করেছি। অথচ আমাদের প্রস্তুতকারকরা নিজ দেশে মনোযোগ পাওয়ার জন্য রীতিমতো লড়াই করছেন।

ভারতের ‘ড্রাইভ ইউ’ নামের ড্রাইভার সার্ভিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রাহম শাস্ত্রী লিংকডইনে লিখেছেন, ‘‘ভারতের নিজস্ব টুইটার, গুগল, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক থাকা উচিত—যেমন চীনের আছে।’’

দেশীয় বাজারে বিদেশি ব্র্যান্ডের সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ভারতীয় খুচরা কোম্পানিগুলোর বিশ্ববাজারে টিকে থাকা ব্যাপক চ্যালেঞ্জের। তবে ভারতীয় আইটি সেবা প্রদানকারী টিসিএস ও ইনফোসিসের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বৈশ্বিক অর্থনীতিতে জোরাল অবস্থান তৈরি করেছে।

রোববার বেঙ্গালুরুতে এক সমাবেশে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নাগরিকদের ‘আত্মনির্ভর’ হওয়ার বিশেষ আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ভারতীয় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো বিশ্ববাজারের জন্য পণ্য তৈরি করে। বর্তমানে ভারতের প্রয়োজনকে আরও অগ্রাধিকার দেওয়ার সময় এসেছে। তবে বক্তৃতায় তিনি কোনও কোম্পানির নাম উল্লেখ করেননি।

দেশজুড়ে মার্কিন পণ্যবিরোধী প্রতিবাদ চললেও সোমবার রাজধানী নয়াদিল্লিতে দ্বিতীয় শোরুম উদ্বোধন করেছে টেসলা। ইলন মাস্কের মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠানের শোরুম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ও যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সমর্থিত স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ রোববার ভারতে ছোট ছোট জনসভা করে মার্কিন ব্র্যান্ড বয়কটের আহ্বান জানিয়েছে। সংগঠনটির সহ-সমন্বয়ক অশ্বিনী মহাজন বলেন, মানুষ এখন ভারতীয় পণ্যের দিকে নজর দিচ্ছে। এটি কার্যকর হতে কিছুটা সময় লাগবে। এটি জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমের ডাক।

তিনি ভারতীয়দের মাঝে হোয়াটসঅ্যাপে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের পণ্যের একটি তালিকাও প্রচার করছেন। রয়টার্সের কাছে দেওয়া এই তালিকায় বিদেশি পণ্যের বিকল্প হিসেবে দেশীয় ব্র্যান্ডের নাম উল্লেখ রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংগঠনটির প্রচারণায় ‘বিদেশি ফুড চেইন বর্জন করুন’ শিরোনামে ম্যাকডোনাল্ডসসহ একাধিক রেস্টুরেন্ট ব্র্যান্ডের লোগোও দেখা যায়।

এনআর/

banner

এ জাতীয় আরো সংবাদ

প্রকাশক: আবু সায়েম খালেদ
পরিচালক: এইচ. এম. মুহিউদ্দিন খান
আসকান টাওয়ার, ৬ষ্ঠ তলা, ১৭৪ ধোলাইপাড়
যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪
ইমেইল: info@36news24.com
ফোন: 01401 400222